চিলমারী-রৌমারী ফেরি দুই মাস ধরে বন্ধ

দীর্ঘদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় নৌপথ ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল এখন বন্ধ রয়েছেফাইল ছবি

দুই মাস ধরে বন্ধ আছে কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল। এতে এই অঞ্চলের পণ্য পরিবহন ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় নৌপথ ভরাট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ফেরি বসিয়ে রাখায় প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনকে (বিআইডব্লিউটিসি)।

জানা যায়, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি যানবাহন চলাচলের সময় রৌমারীর কুটিরচর এলাকায় পুরোনো একটি সেতু ভেঙে যায়। ওই দিন থেকে ওই পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহন না থাকায় চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচলও বন্ধ আছে।

ফেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়েছে। সব দিক থেকে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা দাবি করব, শিগগিরই যেন ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
নাহিদ হাসান, প্রধান সমন্বয়ক, রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি

বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ভেঙে যাওয়া সেতু সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের আগপর্যন্ত বিকল্প পথ (ডাইভারশন রোড) তৈরি করে দেওয়ার কথা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। বিআইডব্লিউটিসির রৌমারী-চিলমারী কার্যালয়ের নৌ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিকল্প পথ করতে এলজিইডির ১০-১২ দিন লাগার কথা। অথচ দুই মাস হতে চলল, এখনো তা তারা করেনি। ফলে ফেরি চলাচল শুরু করা যাচ্ছে না। এতে সব দিক থেকেই ক্ষতি।

কুড়িগ্রামের রৌমারীর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মনসুরুল হক ৭ মার্চ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকল্প পথ নির্মাণের কাজ চলমান। আশা করি, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে বিকল্প পথ তৈরি হয়ে যাবে। তখন সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে।’

লোকসান গুনতে হচ্ছে

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রথমবারের মতো চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। সেখানে বর্তমানে ‘কদম’ ও ‘কুঞ্জলতা’ নামে দুটি ফেরি রয়েছে। দুটি ফেরিতে ১৫ জন করে মোট ৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। তাঁদের বেতন-ভাতা ছাড়াও ফেরি দুটি সচল রাখতে প্রতি মাসে অন্তত চার লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে বিআইডব্লিউটিসিকে।

বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে ফেলে না রেখে চালু পথে ফেরি দুটি নিয়ে আসা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রে চর জেগে ওঠে। কিন্তু নিয়মিত চলাচল করলে ফেরির পাখার কারণে বালু সরে যায়। ফেরিপথ সচল থাকে। কিন্তু চলাচল বন্ধ থাকলে ফেরিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের পণ্যবাহী ট্রাক এই ফেরিপথে চলাচল করে। দিন দিন এই ফেরিপথ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। তবে চালুর পরই ছোট একটি সেতু ভাঙা এবং তার বিকল্প পথ তৈরি না করায় এই ফেরিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পাবনার কাজীরহাট ও মানিকগঞ্জের আরিচা ফেরিঘাট দিয়ে এই অঞ্চলের পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে ব্যয় ও সময় বেড়েছে। অন্যদিকে কিছু পণ্য বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়েও পারাপার হচ্ছে। সেতুতে টোল দেওয়ায় ব্যয় বাড়ছে ব্যবসায়ীদের।

জানা গেছে, রৌমারীর কুটিরচর এলাকার সেই ভাঙা সেতুতে পাটাতন, কাঠ বসিয়েছে এলজিইডি। এর ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে হালকা ধরনের যানবাহন চলাচল করছে।

এলজিইডির রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় জানিয়েছে, যে সেতু ভেঙেছে, তা বহু পুরোনো ছিল। সেটা নতুন করে নির্মাণের জন্য নকশা তৈরি করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর এখনো অনুমোদন মেলেনি। অনুমোদিত হলে নতুন করে সেতু নির্মাণ করতে সময় লাগবে। নতুন সেতু হওয়ার আগপর্যন্ত বিকল্প পথ তৈরি করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে নাগরিক সংগঠন রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ হাসান প্রথম আলোকে, ‘অনতিবিলম্বে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু করা দরকার। এই পথে ফেরি চলাচলকে ঘিরে দুই পারে বেশ কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল, এতে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, এখন তা বন্ধ রয়েছে। ফেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়েছে। সব দিক থেকে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা দাবি করব, শিগগিরই যেন ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’