বাদ গেল সহকারী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার ৪৯২ পদের প্রস্তাব

বাংলাদেশ সরকার

অর্থ বিভাগ রাজি না হওয়ায় সহকারী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার ৪৯২টি নতুন পদ তৈরির প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে একাই এ–সংক্রান্ত দায়িত্ব সামলাতে হবে। এখন ৪৯২টি পদ বাদ দিয়ে মন্ত্রণালয় নতুন জনবল কাঠামো তৈরি করছে।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত যেসব পদ বিদ্যমান নিয়োগ বিধিতে নেই, সে পদগুলো নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. ইকবাল হোসেন। ওই কমিটি ৯টি সভা করে সহকারী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার পদসহ প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধি ও জনবল কাঠামো তৈরি করে।

মোট ৪ হাজার ৮৮ জনের জনবল অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ছিল ২২টি প্রকল্প ও ২টি কর্মসূচির ১ হাজার ৯৯৪টি এবং রাজস্ব বাজেটের ২ হাজার ৯৪টি পদ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ বিভাগ রাজি না হওয়ায় সহকারী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার পদগুলো বাদ দিয়ে ৩ হাজার ৫৯৬টি পদের জনবল কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেকোনো পদের সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ সহকারী পদ থাকে। কিন্তু উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে একাই এ–সংক্রান্ত দায়িত্ব সামলাতে হয়। এ কারণে সহকারী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার পদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেছে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ২০১৮ সালে সহকারী মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার ৪৯২টি পদ তৈরির প্রস্তাব করে।

ওই বছরের ১৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন পদগুলোর বিষয়ে রাজি হয়, তবে অর্থ বিভাগ আপত্তি জানিয়েছিল। এবার আপত্তির প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কাগজে-কলমে উল্লেখ না করলেও করোনাকালের আর্থিক বিষয়টি মাথায় রেখে আপত্তি জানায় অর্থ বিভাগ।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর মন্ত্রণালয় পদগুলোর বিষয়ে আবার প্রস্তাব পাঠায়। ১৩ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগ এ নিয়ে আপত্তি জানায়। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর চিঠি না পাঠিয়ে ৪৯২টি পদ বাদ দিয়ে জনবল কাঠামো তৈরি করতে বলেন।

নতুন উপজেলাসহ দেশে এখন উপজেলার সংখ্যা ৪৯৪। এর মধ্যে ৪৩০টি উপজেলায় মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রয়েছেন। ৬৪টি সদর উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন কর্মসূচি কর্মকর্তা (প্রোগ্রাম অফিসার)। ২০১৮ সালে এই পদগুলো ১০ম থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত হয়। কর্মসূচির কর্মকর্তারা জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কাজে সহায়তা করেন।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ‘কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব’ শিরোনামের নির্দেশনায় উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার জন্য ২৬টি এবং কর্মসূচি কর্মকর্তার জন্য ৯টি দায়দায়িত্ব উল্লেখ করা আছে। উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে উপজেলার রাজস্ব বা অস্থায়ী ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বছরের কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন, ভিজিডি, ‘বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত’ দুস্থ নারীদের তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করা, ভাতা বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো, দরিদ্র নারীদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা, উপজেলা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব এবং জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন, অভিযোগ নেওয়া, পরামর্শ দেওয়া ও মীমাংসা করা, সরকারের বিভিন্ন পুনর্বাসন কার্যক্রমে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

সাধারণত উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মকর্তার সঙ্গে একজন অফিস সহকারী ও একজন অফিস সহায়ক থাকেন। তবে ১২৫টির মতো পুরোনো উপজেলায় একজন প্রশিক্ষকও রয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলায় সাতটি উপজেলা রয়েছে। জেলার আশাশুনি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা থাকলে দায়িত্ব পালনে আরও সুবিধা হতো। অনেক সময় দেখা যায়, একই দিনে দুটি সভা থাকে। যেকোনো একটিতে যোগ দিতে হয়। এ ছাড়া তিনি ছুটি নিলে তাঁর দায়িত্ব পালনে কেউ থাকেন না।