কোথায় কত দুর্নীতি হয়েছে স্পষ্ট বলতে হবে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে বক্তব্য দেন
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অমূলক। গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তিনি বলেছেন, কোথায় কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। তাহলে তিনি এর জবাব দেবেন।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে মোকাব্বির খানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এমন কোনো শক্তি তৈরি হয়নি যে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারে।

আজ ছিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের জন্য নির্ধারিত দিন। প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই কেবল দায়ী নয়, অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়ও আছে। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট এবং বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের ইনডেমনিটি—এগুলো অনেক কিছুই দায়ী। এর ফলাফল কী হয়েছে? ডলার–সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষের জীবন–জীবিকা আজ দুর্বিষহ।

মোকাব্বির বলেন, বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কিত। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অঙ্কটা বলেনি। কারণ, এটি বললে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হবে। তিনি জানতে চান, নির্বাচনী বছরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হবে না—এই বিষয়ে আশ্বস্ত করা হবে কি না। আর বিগত বছরে ইনডেমনিটির সুযোগ নিয়ে যেসব কুইক রেন্টাল হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা লুটেছে, তাদের ওপর ৫০ শতাংশ ‘উইন্ডফিল্ড ট্যাক্স’ আরোপ করা হবে কি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে হচ্ছে, আমাদের সংসদ সদস্য বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে সমস্ত অভিযোগ তিনি এনেছেন, তা সম্পূর্ণ অমূলক। তিনি মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। এই মেগা প্রকল্পের সুবিধাভোগী কারা? এ দেশের সাধারণ মানুষ। এই মেগা প্রকল্প অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি, আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করেছি। মেট্রোরেল, এটাও সাধারণ মানুষের যোগাযোগের জন্য। মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অল্প সময়ে আসতে পারছে স্বল্প খরচে। এটা সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। মাননীয় সংসদ সদস্য অনেক অর্থশালী–সম্পদশালী, গাড়িতে চড়েন। উনার এসব সমস্যা জানার কথা নয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আপনার মাধ্যমে মাননীয় সম্পূরক প্রশ্নকর্তাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে, সেই কথাটা তাঁকে এখানে স্পষ্ট বলতে হবে; যার জবাব আমি দেব।’

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার ফেডারেল কোর্টের মামলার রায়েই বলা হয়েছে, সব অভিযোগ মিথ্যা। কোনো অভিযোগ সত্য নয়, সব ভুয়া। দুর্নীতি যদি সত্যিই হতো, তাহলে এত অল্প সময়ে এসব প্রকল্পের কাজ কি শেষ হতো?

মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। ওনার একটা সেকেন্ড হোমও আছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম কত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে? সেখানে বিদ্যুতের দাম দেড় শ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ভোগ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয়। নির্দেশনা দিয়ে তা মনিটর করা হয়। নিয়মের ব্যত্যয় হলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সেই অবস্থা নেই।’

বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো করার কারণে মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখানে দুর্নীতি হলে এত বিদ্যুৎ দিতে পারার কথা ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে বড় বড় মহারথী আমাদের দুর্নীতির খোঁজ পায়নি, সেখানে কিছু লোক ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছেন কুইক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল। যদি সব বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হতো এখন! আওয়ামী লীগ সরকার এসে যতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে, সেসব যদি বন্ধ করে দিই, কী অবস্থা হবে আপনাদের? বলেন। কয়েক দিন মাত্র লোডশেডিং দিয়েছিলাম তাই চারদিকে হাহাকার। সেই লোডশেডিং যাতে না হয়, সে জন্য কুইক রেন্টাল আবার চালু রাখতে হয়েছে। নিজেরা ভোগ করবেন আর বলার সময়ে অভিযোগ করবেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যারা এরপরে বেশি বলবেন, তাঁদের বিদ্যুৎ চাওয়াটা বন্ধ করে দেব। তখন দেখি কী হয়?’

মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বব্যাপী দারুণ খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। তার কিছু আভাসও দেখা যাচ্ছে। তাই তিনি কোনো জমি অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান। সে সঙ্গে জনগণকে সাশ্রয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ী, যাঁরা ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করেন, আসলে এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় রোজা-উৎসব বা চাহিদার সময়ে তাঁরা যে করে হোক দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পৃথিবীর অন্য দেশে দেখি উৎসব–পার্বণে দাম কমায়। আমাদের এখানে উল্টো কাণ্ড। শুধু তা–ই নয়, অনেক সময় তাঁরা পণ্য আমদানি করতেও ঢিলেমি করেন। জিনিসের দাম ও চাহিদা বাড়িয়ে তাঁরা ব্যবসা করতে চান। এটা আসলে অমানবিক।’

ক্ষমতাসীন দলের আরেক সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোগ্যপণ্য কেউ মজুতদারি করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসে যে পণ্যগুলো প্রয়োজন, তার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে, মানুষ রোজার সময় যেন কষ্ট না পায়। ওই সময় যে পণ্যগুলো একান্তভাবে প্রয়োজনীয়, তা যেন জনগণ যথাযথভাবে পায়, তার জন্য এসব পণ্য আমদানির এলসি খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ এটা নিয়ে অন্য রকম কিছু করতে গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ মজুত করার চেষ্টা করলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।