জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ পূজামণ্ডপে সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতীপূজাছবি: শাহাদাত হোসেন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি বিভাগ, ২টি ইনস্টিটিউট, চারুকলা অনুষদ এবং ছাত্রী হলের ৩৭টি মণ্ডপে সরস্বতীপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপেই উৎসবের আমেজ ছিল চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে ইংরেজি বিভাগে নারীর পৌরোহিত্যে পূজা একটি ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত ছিল।

দিনব্যাপী পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। শিক্ষার্থীদের সরব অংশগ্রহণে পূজা হয়ে উঠেছিল বর্ণিল ও উৎসবমুখর।

সরস্বতীপূজায় দ্বিতীয়বারের মতো নারী পুরোহিতের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। গত বছর প্রথমবারের মতো এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মহাশ্বেতা রায় মিতু বলেন, ‘আমাদের পূজার অন্যতম উদ্দেশ্য বিদ্যাদেবীর আরাধনা। বিদ্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই, তাই পূজার ক্ষেত্রেও থাকা উচিত নয়।’

এবারও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পূজায় পৌরোহিত্য করেন বিভাগের নারী শিক্ষার্থী। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবন-১–এর সামনে ইংরেজি বিভাগের পূজামণ্ডপে এ চিত্র দেখা যায়। পূজায় নারী পুরোহিত হিসেবে ছিলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সমাদৃতা ভৌমিক। তিনি ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।

সমাদৃতা ভৌমিক বলেন, ‘শাস্ত্রে নারীদের পৌরোহিত্যের কোনো বাধা নেই, তবে সামাজিক বাস্তবতায় এটি এখনো স্বাভাবিক বিষয় হয়ে ওঠেনি। আমি চাই, এই উদ্যোগ আরও প্রসারিত হোক এবং নারীরা পূজার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কাজে সম্পৃক্ত হোক।’

আজ সকাল থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিভাগীয় মণ্ডপে এসে পূজার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। পুরোহিতদের মন্ত্রোচ্চারণ, অঞ্জলি প্রদান এবং দেবীর আশীর্বাদ কামনার মাধ্যমে পূজার মূল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এরপর চলে প্রসাদ বিতরণ ও পূজা ঘিরে আনন্দঘন সময় কাটানোর পালা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী প্রান্ত দাসগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরস্বতীপূজা একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। সবাই একসঙ্গে মিলিত হয়ে বিদ্যাদেবীর আশীর্বাদ কামনা করি, যা সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।’

ইংরেজি বিভাগের সরস্বতীপূজায় পৌরোহিত্য করেন সমাদৃতা ভৌমিক
ছবি: শাহাদাত হোসেন

আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নিজেদের বিভাগের সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। যেমন আইন বিভাগের মণ্ডপ দেশের বিচার বিভাগের সুপ্রিম কোর্টের ভবনের আদলে করা হয়েছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পূজামণ্ডপে হাতে বুম, মোবাইল, কলমসহ ভুয়া তথ্য ও সঠিক তথ্য যাচাইয়ের দেয়ালিকা রাখা হয়। পরিসংখ্যান বিভাগের পূজামণ্ডপে বিভিন্ন স্মারকচিহ্ন দিয়ে সাজানো হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পূজামণ্ডপে মনীষীদের উক্তি দিয়ে ব্যানার তৈরি করা হয়। লোক প্রশাসন বিভাগের পূজামণ্ডপে বিভিন্ন থিওরি, বিভিন্ন পলিসির নাম দিয়ে বই, দেয়ালিকা সাজানো হয়।

দুপুরের পর গানের তালে তালে নেচে শিক্ষার্থীরা পূজার আনন্দ ভাগ করে নেন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ-১, ২ ভবন, কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার শান্ত চত্বর, শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, পূজায় শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। ক্যাম্পাসের বাইরে দর্শনার্থীদের উদ্দীপনাও ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। গত বছর প্রথমবারের মতো নারী পুরোহিতের মাধ্যমে পূজা হয়েছিল, এবারও সেই ধারা বজায় রেখেছে ইংরেজি বিভাগ। সম্মিলিত এই ঐক্যের আবহ ভবিষ্যতেও বজায় থাকুক।