‘বিস্ময়কর সবকিছু’ প্রথম আলোয়

‘বিস্ময়কর সবকিছু’ নাটকের একটি মুহূর্তে অভিনয়শিল্পী মহসিনা আক্তার। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে
ছবি: খালেদ সরকার

‘হাওয়াই মিঠাই’, ‘বাকরখানি’, ‘বেহালা’, ‘স্টেশনের ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ’, ‘কাটা ঘাসের ঘ্রাণ’—বিস্ময়কর এ রকম নানা কিছুর একটি তালিকা বানাতে শুরু করে সাত বছরের এক বালিকা। সেটি একসময় হয়ে ওঠে অতিকায় একটি বই। এই হচ্ছে সৈয়দ জামিল আহমেদ নির্দেশিত বিস্ময়কর সবকিছু নাটকের শুরুর কাহিনি। এত দিনে এ নাটক দেখে ফেলেছেন ঢাকার অনেক মানুষ। গল্পটা শুনেছেন আরও অনেকে। শনিবার নাটকটির ৩১তম প্রদর্শনী হয়ে গেল কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে।

বিস্ময়কর সবকিছুর উপভোগ এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। এ নাটক ব্যক্তিগত বিস্ময়কর অনেক কিছুর কথা মনে করিয়ে দেয়। জীবনের প্রতি মনোযোগী করে তোলে।

জীবনকে ভালোবেসে একে আঁকড়ে ধরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। নাটকের দল স্পর্ধারও লক্ষ্য সেটাই। দর্শককে নাটকের অংশ করে নিতে এর সদস্যরা হাতে হাতে তুলে দেন সংলাপ লেখা কাগজ, দর্শকই যেন নাটকের প্রম্পটার। চোখের পলকে দেড় ঘণ্টা কখন পার হয়ে যায়, টের পাওয়া যায় না। আত্মহত্যাপ্রবণতার বিরুদ্ধে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হওয়ার বার্তা দেয় এই নাটক। জানায়, বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে আছে অজস্র বিস্ময়। সেসব সৌন্দর্য উপভোগ করা আর মানুষের সঙ্গে কথা বলা ভীষণ জরুরি।

আত্মহত্যাপ্রবণ মাকে বাঁচাতে বিস্ময়কর সবকিছুর তালিকা শুরু করে মেয়ে। মাকে সে বাঁচাতে পারে না। কিন্তু বের করে সব বিরূপতা সত্ত্বেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার উপায়। সেই গল্প বলতে বলতে দর্শককেও নাটকের অংশ করে নেন এর একক অভিনয়শিল্পী মহসিনা আক্তার। গত কয়েক দশকের জনপ্রিয় সব গান নাটকে ঘুরেফিরে আসে গল্পের হাত ধরে।

অধ্যাপকের চরিত্রে অভিনয় করেন সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক
প্রথম আলো

প্রথম আলোর দশম তলার সভাকক্ষে গতকাল শনিবার বিকেলে কর্মীদের জন্য আয়োজিত হয় এ প্রদর্শনী। এতে দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর বিভিন্ন বিভাগের ৫১ জন কর্মী। দর্শকসারি থেকে উঠে এসে এ নাটকে অভিনয় করেন পশুচিকিৎসক চরিত্রে পল্লব মোহাইমেন, বাবা চরিত্রে রাজীব হাসান, অধ্যাপক চরিত্রে আনিসুল হক, প্রেমিক–স্বামী শান্ত চরিত্রে মাহফুজ রহমান এবং স্কুলশিক্ষক চরিত্রে শুভা জিনিয়া চৌধুরী। নিজের অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মাহফুজ রহমান বলেন, ‘নাটকটির বিষয়বস্তু অত্যন্ত সময়োপযোগী। আত্মহত্যাসংক্রান্ত খবর উপস্থাপনে কী নীতি অনুসরণ করা উচিত, সে কথা এতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।’

২০১৩ সালে লেখা ব্রিটিশ নাট্যকার ডানকান ম্যাকমিলানের এভরি ব্রিলিয়ান্ট থিং থেকে বিস্ময়কর সবকিছু বাংলায় অনুবাদ করেছেন নাট্যকার সৈয়দ জামিল আহমেদ।

পরিকল্পনাও তাঁর। তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্র কার্যালয়ে এই প্রথম নাটকটির প্রদর্শনী করা হলো। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে যাঁরাই এর প্রদর্শনীর জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন, আমরা আন্তরিকভাবে সাড়া দেব।’ অভিনয়শিল্পী মহসিনা আক্তার বলেন, ‘নাটকটি যে মানুষের ভালো লাগছে, সেটা দেখে আমাদেরও শ্রম সার্থক বলে মনে হচ্ছে।’

বিস্ময়কর সবকিছু নাট্যমঞ্চের বদলে বারবার যায় মানুষের কাছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সব অনুষঙ্গ যুক্ত হয়ে এটি হয়ে উঠছে আরও ক্ষুরধার। স্পর্ধার ফেসবুক পেজে চোখ রাখলেই এর পরের প্রদর্শনীর খবর জানা যাবে।