বাংলাদেশে বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকবে কি না, নির্ধারণ করবে আগামী নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ
ফাইল ছবি

বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আলোচনা, সংবিধানের ভেতরে–বাইরে পথ খোঁজা প্রয়োজন। দেশে প্রকৃতপক্ষে একটি কার্যকর বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকবে কি না, তা নির্ধারণ করে দেবে আগামী নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করছে এবং কীভাবে অংশগ্রহণ করছে।
আজ শনিবার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি: কোথায় দাঁড়িয়ে, গন্তব্য কোথায়?’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিনে—এমন মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, ২০১১ সালে ক্ষমতার হাতবদলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হয়েছে। এখানে কোনো সমঝোতার ব্যাপার নেই। এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদর্শিক বৈধতার জায়গা নেই। এখন কেবল একটি সাংবিধানিক রূপ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা দরকার। কে নির্বাচনে অংশ নিল, কে নিল না, সেটা বিষয় নয়। মানুষ ভোট দিতে পারছেন কি না, সেটাও বিষয় নয়। নির্বাচন কমিশনের কথায় সেটা স্পষ্ট।

দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলগুলোর সামনে পথ কী—এমন আলোচনায় আলী রীয়াজ বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা এমন রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ফল পূর্বনির্ধারিত। এই অবস্থার বদল ঘটানোর জন্য দরকার রাজপথে চাপ তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অহিংস পথে টিকে থাকা। গত কয়েক মাস বিএনপি সেটাই করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের হাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী আছে এবং ক্ষমতার উচ্চপর্যায় থেকে ক্রমাগত উসকানি দেওয়া হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিরোধীরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে কি না, সেটাই আগামী কয়েক মাসে দেখা যাবে। সে কারণে আগামী কয়েক মাসেই রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখা নির্ধারিত হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার
ফাইল ছবি

আলী রীয়াজ মনে করেন, ক্ষমতাসীনদের সামনে এখন বিকল্প হচ্ছে দমন–পীড়ন বাড়ানো এবং কো–অপটেশন (অন্তর্ভুক্তি)। এখানে সম্ভাব্য হচ্ছে বিরোধীদের মধ্য থেকে টেনে নেওয়া বা ইসলামপন্থীদের একাংশের সঙ্গে আরও বেশি করে ঘনিষ্ঠ হওয়া। তবে কাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আলোচনা করা। সংবিধানের ভেতরে–বাইরে পথ খোঁজা।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে কার্যকর বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকবে কি না, তা নির্ধারণ করে দেবে আগামী নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করছে এবং কীভাবে অংশগ্রহণ করছে। রাজনীতিতে অনেক দলের উপস্থিতিই বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রমাণ করে না। গণতন্ত্রের অন্যান্য উপাদানের কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, ক্ষমতাসীনদের নির্ধারিত সীমানার ভেতরে অনেক দলের উপস্থিতি বহুদলীয় ব্যবস্থা নয়।

কয়েকটি কারণে সরকার গত জুলাই মাস থেকে বিরোধীদের ছাড় দিচ্ছে মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, সেগুলো হলো অর্থনৈতিক সংকট, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ তৈরি করা ও বিদেশিদের চাপ। বিদেশিদের চাপের কারণ হলো ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব। এ কারণে দুটি শিবির তৈরি হচ্ছে। চীন, রাশিয়া ও ভারত একদিকে। তারা মনে করছে, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা থাকা দরকার। অন্যদিকে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো।

ওয়েবিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জনকল্যাণ নয়, এখন রাজনীতির লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকা। এখন গণতন্ত্রের ঘাটতি ও সুশাসনের অভাবে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার সৃষ্টি হয়েছে, ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ হয়েছে। রাজনীতি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান অবস্থার উত্তরণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার।

অন্যদের মধ্যে ওয়েবিনারে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক বীনা ডি কস্টা ও সাংবাদিক মাসুদ কামাল বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন