মেলায় বই বিক্রি নিয়ে অসন্তুষ্টি
বইমেলায় লোকজন যতই আসুন না কেন, এবার বিক্রি নিয়ে প্রকাশকদের মন ভরছে না। গতকাল ১৮ দিন পেরিয়ে গেল, কিন্তু যে ধারায় বিক্রি হচ্ছে তাতে অবশিষ্ট দিনগুলোতেও যে খুব বড় পরিবর্তন হবে, এমন লক্ষণ দেখছেন না তাঁরা।
মেলার বিক্রি সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার সাহিত্য প্রকাশের স্টলে ব্যবস্থাপক রথীন দাস বলেন, ‘আমি ১৯৭৩ সাল থেকে মেলা করছি। করোনার সময়টা বাদ দিলে বেচাকেনায় এমন নিম্নগামী অবস্থা আর দেখিনি।’ এবার তাঁদের প্রকাশনী থেকে রফিউর রাব্বির প্রবন্ধ বৃত্তের বাইরে এবং নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য, মফিদুল হক সম্পাদিত রশীদ করীম অমনিবাসসহ বেশ কিছু নতুন বই এসেছে।
অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথও বললেন অসন্তুষ্টির কথা। বেচাকেনা তো কমই, তার ওপর প্রচুর হকার ঘুরছে মেলার মাঠে। সামনের ফুটপাতে পাইরেসি বই বিক্রি হচ্ছে। ভেতরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নের সামনে। ইচ্ছামাফিক গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় বাণিজ্যিক স্থাপনা। এতে বইমেলা তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। এসব দেখভাল করার মতো মেলার কোনো অভিভাবক আছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে না।
বেচাকেনা তো কমই, তার ওপর প্রচুর হকার ঘুরছে মেলার মাঠে। সামনের ফুটপাতে পাইরেসি বই বিক্রি হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী পেশাগত কাজে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে লম্বা সময় অবস্থান করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর বই আফ্রিকার দিনরাত্রি প্রকাশ করেছে প্রসিদ্ধ পাবলিশার্স। কথা হলো তাঁদের স্টলের ব্যবস্থাপক দ্বীপ মল্লিকের সঙ্গে। বিক্রি সম্পর্কে তাঁর এককথার উত্তর, ‘খুবই কম।’ গতকাল মেলায় লোকজনের উপস্থিতিও ছিল স্বল্প। বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন ছাড়া অধিকাংশ স্টলেই বেচাকেনা তেমন হয়নি। অনেক স্টলের সামনে লোকজনই দেখা যায়নি।
তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৭৯টি। প্রথমা প্রকাশন থেকে এসেছে আনিসুল হকের কিশোর উপন্যাস নিশি ট্রেনের ভূত, কথাপ্রকাশ এনেছে সরদার ফজলুল করিমের দিনলিপি অতিক্রান্ত সময়, আত্মপ্রকাশ এনেছে আলোকচিত্রী শহীদুল আলম বাদলের আলোকচিত্রের অ্যালবাম মৌন মুখর বাদল দিন, বিশ্বসাহিত্য ভবন এনেছে হাসান হাফিজের কবিতা জয়গাথা জুলাই বিপ্লব, মিজান পাবলিশার্স এনেছে ফারুক নাওয়াজের কিশোর উপন্যাস আঙ্কল হার্বাটের পোষা ভূত, অ্যাডর্ন এনেছে হরিপদ দত্তের উপন্যাস চুয়াত্তরের অলৌকিক শিশু, তাম্রলিপি এনেছে অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরীর আত্ম–উন্নয়নমূলক বই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সহজ পাঠ, আবিষ্কার এনেছে সৈয়দ শাহনেওয়াজ কবিরের উপন্যাস মায়ারজাল, কাকাতুয়া এনেছে গাজী তানজিয়ার গল্প জাদুঘরের আজব জাদু, নবযুগ এনেছে বিশ্বজিৎ ঘোষের প্রবন্ধ ঠাকুরমার ঝুলি: পাঠ-সমীক্ষা, স্বপ্ন ’৭১ এনেছে মাহফুজ রিপনের গল্প অনুগল্পের ঘোড়া ও হুমায়ন কবিরের কানফুল।
প্রথমা প্রকাশনের স্টলে গতকাল আগে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে আকবর আলি খানের দারিদ্র্যের অর্থনীতি: অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ, আনিসুল হকের উপন্যাস কখনো আমার মাকে, আবুল মনসুর আহমদের গল্প আয়না, আলতাফ পারভেজের যোগেন মণ্ডলের বহুজনবাদ ও দেশভাগ, শাহীন আখতারের উপন্যাস অসুখী দিন, মো. তৌহিদ হোসেনের বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর বইগুলোর বিক্রি ভালো ছিল।
শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সামরিক বাহিনীর অনেক বাঙালি সদস্যের মতো ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারীও আটকে পড়েন পশ্চিম পাকিস্তানে। কিন্তু দৃঢ়সংকল্প করেন, যেভাবেই হোক শত্রুভূমি থেকে পালাবেন, যোগ দেবেন মুক্তিযুদ্ধে। নানা পরিকল্পনার পর এক ঝড়বৃষ্টির রাতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পাড়ি দেন কাশ্মীর সীমান্ত। এরপর সম্মুখযুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করে ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ‘বীর প্রতীক’ খেতাব। যুদ্ধের দিনগুলোর শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি উঠে এসেছে বজলুল গনি পাটোয়ারীর (অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল) শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে নামের বইটিতে।