ফোর–জির সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস নির্ধারণ: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ফোর–জির সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই তথ্য জানান।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছেন, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিম্নমানের বলে ঘোষণা দেওয়ার পর তাঁরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটি নতুন কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্ক করেছেন। এটি গত সপ্তাহে বিটিআরসির বৈঠকে মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন ও আইএসপি সেবাদাতাদের জন্য পাস হয়েছে। নতুন এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা মতে, ফোর-জির সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে। তদারকি বাড়াতে বিটিআরসি প্রতি মাসে আগের মাসের নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্স ও হেলথ চেক করবে, যা সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর হবে।
বাংলাদেশে এই চর্চাটা নতুন বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, টেলিকম সেবার মান নিশ্চিত করতে কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা একটা আন্তর্জাতিক চর্চা। এতে ড্রাইভ টেস্ট মানদণ্ডে অপারেটরদের ফোর-জি সেবার সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস থাকতে হবে। কমানো হয়েছে কলড্রপের সর্বনিম্ন হার। এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে সেবার বিভিন্ন মানদণ্ড সূচক। এসব মানদণ্ডে অপারেটরদের বাধ্যতামূলকভাবে মাসিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। আগের কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্ক খুব বাজে ছিল, যা সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত করা হয়েছে। শিগগির হালনাগাদ এই নির্দেশিকা জারি করা হবে।
এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) বেঞ্চমার্ক টেলিযোগাযোগ খাতে নাগরিকদের মানসম্মত সেবা দিতে সেবাদাতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করবে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফোর-জিতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ করেনি। ফলে সেবার মান নিম্নমুখী। এর উত্তরণে নতুন লাইসেন্স পলিসিতেও ‘লাইসেন্স অবলিগেশন’ ও কোয়ালিটি অব সার্ভিসের কথা বলা হয়েছে। এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্ক টেলিযোগাযোগ খাতে নাগরিকদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে সেবাদাতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে সেবার মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সংশোধিত কিউওএসে কী আছে, তার একটি বিবরণ ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সেগুলো হলো—
*নেটওয়ার্ক পর্যায়ে কল সেটআপ সাকসেস রেটের হার অন্তত ৯৯ শতাংশ হতে হবে। জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে তা ৯৮ শতাংশ।
*কলড্রপের হার টু–জি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ, আর উপজেলাপর্যায়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।
*ডেটা সেবায় ফোর-জি সংযোগ সফলতার হার ৯৯ শতাংশ, জেলাপর্যায়ে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ থাকতে হবে।
*গড় ব্যবহারকারী ডাউনলোড গতি নেটওয়ার্ক পর্যায়ে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৫ এমবিপিএস, জেলাপর্যায়ে ২ দশমিক ৫ এমবিপিএস হতে হবে।
*ড্রাইভ টেস্টে ভয়েস সেবায় কল সেটআপ সাফল্যের হার ৯৮ শতাংশ বা তার বেশি। কলড্রপ (অটোমোড) ২ শতাংশের মধ্যে। ভোল্টির (ভয়েস ওভার এলটিই প্রযুক্তি) জন্য গড় ব্যবহারকারী মান সূচক ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫ হতে হবে।
*ডেটা সেবায় ডাউনলোড স্পিড সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস, আপলোড ২ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেবার মান তদারকিতে মাসিক রিপোর্টিং
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, অপারেটরদের এখন থেকে প্রতি মাসে তাদের নেটওয়ার্কের মানসংক্রান্ত মূল সূচক (কেপিআই) জমা দিতে হবে। এসব সূচক মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—অ্যাক্সেসিবিলিটি, রিটেইনেবিলিটি ও নেটওয়ার্ক ইন্টেগ্রিটি।
অ্যাক্সেসিবিলিটি (নেটওয়ার্কে প্রবেশ ও কল সেটআপ): এই সূচকগুলোর মাধ্যমে বোঝা যাবে, গ্রাহকেরা কতটা সফলভাবে নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারছেন ও কল সেটআপ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কল সেটআপ সাকসেস রেট (টু–জি ও ফোর-জি-ভোল্টি), পেজিং সাকসেস রেট, আর ইআরএবি সেটআপ সাকসেস রেট। এ ছাড়া যেখানে এই হার ৯০ শতাংশ বা ৭০ শতাংশের নিচে নেমে আসে, সেসব খারাপ সেল আলাদা করে চিহ্নিত করতে হবে।
রিটেইনেবিলিটি (সংযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা): এই সূচকগুলোতে দেখা হবে, কল বা ডেটা সেশন শুরু হওয়ার পর তা কতটা স্থিতিশীল থাকে। এর মধ্যে রয়েছে কলড্রপ রেট (২জি ও ৪ জি), ভোল্টি অস্বাভাবিক বিচ্ছিন্নতার হার, এলটিই নন-রিটেইনেবিলিটি, এসআরভিসিসি সাকসেস রেট ও হ্যান্ডওভার সাকসেস রেট।
নেটওয়ার্ক ইন্টেগ্রিটি (নেটওয়ার্কের সার্বিক দক্ষতা-ক্ষমতা): এখানে দেখা হবে, নেটওয়ার্ক অবকাঠামো কতটা কার্যকরভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতি বেস স্টেশনে এলটিই পিআরবি (ফোর-জি রেডিও নেটওয়ার্ক রিসোর্স) ব্যবহার হার, ব্যবহারকারীর আপলিঙ্ক থ্রুপুট (এমবিপিএস) ও সিকিউআই/আরএসআরকিউ মান অনুযায়ী ‘খারাপ স্যাম্পল’-এর শতকরা হার।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিটিআরসি সব সূচকের ফলাফল মাসভিত্তিক গড় করে নেটওয়ার্ক, জেলা ও উপজেলা স্তরে আলাদা আলাদাভাবে জমা নেবে। পাশাপাশি সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করা ৫০টি সেলের আলাদা তালিকা জমা দিতে হবে, যেখানে অ্যাক্সেসিবিলিটি ও রিটেইনেবিলিটি সূচক দুর্বল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে দুর্বল এলাকাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। বাধ্যতামূলক মাসিক রিপোর্টিংয়ের ফলে অপারেটরদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে সেবার মান বজায় রাখতে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও শহরতলি এলাকায়, যেখানে এখনো দুর্বল নেটওয়ার্ক ও ঘন ঘন কল ড্রপ নিয়ে অভিযোগ বেশি।
সংশোধিত এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) ফিক্সড ইন্টারনেট, টেলিফোনি ও এনটিটিএনদের জন্য করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি লিখেছেন, ফিক্সড ইন্টারনেট ও টেলিফোনিতে ফিক্সড টেলিফোন সেবায় কলড্রপ ১ শতাংশের মধ্যে, কল সেটআপ সাফল্যের হার ৯৯ শতাংশের বেশি এবং কল সংযোগ সময় ৬ সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এখানে ইন্টারনেট সেবায় লোকাল ট্র্যাফিকের সংযোগ সময় সর্বোচ্চ ২৫ এমএস, ডেটা হারানোর হার ১ শতাংশের মধ্যে এবং নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা ৯৯ শতাংশ বা তার বেশি হতে হবে। গ্রাহকের প্রান্তে ডাউনলোড-আপলোড স্পিড সাবস্ক্রাইব করা গতির অন্তত ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে। এনটিটিএন অপারেটরদের ক্ষেত্রে ডেটা হারানো সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ল্যাটেন্সি ৫ এমএস এবং সংযোগের জিটার ৩ এমএসের মধ্যে রাখতে হবে। ফাইবার নেটওয়ার্কে সেবার সমস্যা মহানগর এলাকায় ৪ ঘণ্টা এবং গ্রামীণ এলাকায় ৬ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে হবে।
এই কিউওএস অনুযায়ী গ্রাহক অভিযোগ সমাধানে বিটিআরসি কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, নেটওয়ার্ক-সম্পর্কিত নয়—এমন অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে শতভাগ সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া গ্রাহকসেবা সেন্টারে আসা ৯০ শতাংশ কল ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে এবং সব কল ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে রিসিভ করতে হবে।