নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, উন্নত দেশও দেবে: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। এ সময় মঞ্চে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা (বাঁয়ে) এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী (মাঝে)। রংপুর, ২৬ ডিসেম্বরছবি: পিআইডি

নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, এই নৌকা উন্নত দেশও দেবে বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়েছেন তিনি। ভোটের দিন সকাল থেকেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রংপুরের পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও তারাগঞ্জে তিনটি পৃথক জনসভায় ভাষণ দেন। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পাশাপাশি তাঁর স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করবেন।

তিন জনসভায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মনোনীত স্থানীয় তিন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁদের ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিশৃঙ্খলা এড়াতে আওয়ামী লীগের সব প্রার্থীকে সতর্ক করে দেন তিনি।

‘নৌকা অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে’

আওয়ামী লীগের সভাপতি মঙ্গলবার বিকেলে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকায় ভোট দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে এবং এই নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। কাজেই আপনাদের কাছে আমার এটাই আবেদন, আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ।’ রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায়, ‘কি বাহে, একখান ভোট মুই পামু না, একখান ভোট হামাক দেবেন না’, এভাবে ভোট চান প্রধানমন্ত্রী।

পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের একাংশ। রংপুর, ২৬ ডিসেম্বর
ছবি: পিআইডি

জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিজের মেয়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের দিয়ে গেলাম। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করা মানে আমাকে ভোট দেওয়া, জয়কে (সজীব ওয়াজেদ জয়) ভোট দেওয়া। সে জয়ের বোন, পুতুলের (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) বোন।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবার ওয়াদা চাইলে উপস্থিত জনতা সমস্বরে চিৎকার করে দুই হাত তুলে নৌকায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইনশা আল্লাহ নৌকা জিতলে তিনি আবারও আসবেন, এখানে জনসভা করবেন এবং বাদবাকি উন্নয়নকাজগুলোও সম্পন্ন হবে।

২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশের মতোই মঞ্চে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছি এবং বাংলাদেশে এই প্রথম ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। একটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই স্থিতিশীলতা অনেকেই চায় না।’ ২০১৩-১৪ সাল এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও তাণ্ডবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রংপুরও বাদ যায়নি। বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন ও ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এই অগ্নিসন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ হতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ির কাছে রেললাইন থাকলে পাহারা দিতে হবে। কোনো বাস বা গাড়িতে কেউ আগুন দিতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরতে হবে। জনগণকেই এটা প্রতিরোধ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আনন্দিত, গত ১৫ বছরে রংপুরে কোনো মঙ্গা দেখা দেয়নি। এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করেছি। স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসার আমরা উন্নয়ন করেছি।’
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিরীন শারমিন চৌধুরী জনসভায় বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিঠাপুকুরের জায়গীর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন। রংপুর, ২৬ ডিসেম্বর
ছবি: পিআইডি

প্রার্থীদের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে মিঠাপুকুর উপজেলায় আরেকটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। সেখানে তিনি রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমানকে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেন। নির্বাচনে যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সতর্ক করে দেন।

মিঠাপুকুরের জায়গীর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ওই জনসভায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র ও যুবকেরা স্মার্ট ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য তাদের গড়ে তুলব আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট সোনার বাংলা।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলটি নির্বাচনী পথ উন্মুক্ত করায় যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক প্রার্থীকে সতর্ক করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আপনাদের শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে হবে, আবারও জনগণকে সেবা দিতে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষের মনে শান্তি, ঘরে খাবার ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। দেশের মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা ও সুন্দর জীবন পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারাগঞ্জ ওয়াক্‌ফ এস্টেট সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। পাশে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। রংপুর, ২৬ ডিসেম্বর
ছবি: পিআইডি

সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান

মিঠাপুকুরে জনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে তারাগঞ্জ ওয়াক্‌ফ এস্টেট সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের (ভোটারদের) সবার কাছে আমার অনুরোধ, এই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সব ভোটার দয়া করে সকালে উঠে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন।’

জনসভায় শেখ হাসিনা রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরীকে ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

তারাগঞ্জ ওয়াক্‌ফ এস্টেট সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের একাংশ। রংপুর, ২৬ ডিসেম্বর
ছবি: পিআইডি

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অসংখ্য বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গত তিন নির্বাচনে জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে।
তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন এই আসনের প্রার্থী আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বেলা ১১টার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরপর সড়কপথে তারাগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। তারাগঞ্জ থেকে মিঠাপুকুর হয়ে পীরগঞ্জ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষে গোটা রংপুরে ছিল উৎসবের আমেজ।