শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চার হত্যা মামলা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি হত্যা মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সাভার থানায় এসব মামলা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২১৪টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮৫টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে দুজনকে গুলি করে হত্যা
যাত্রাবাড়ীতে মাদ্রাসাশিক্ষক মঈনুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা করেন মঈনুলের বাবা কামরুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২১ জুলাই বেলা দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া উড়ালসড়কে ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। মিছিলে অংশ নেন মঈনুল। তখন স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিলে হামলা চালান ও গুলি ছোড়েন। এতে মঈনুল গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিন রাতে তিনি মারা যান। নিহত মঈনুল ডেমরার আহসানুল হিকমা মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় সাইফুল ইসলাম নামের আরেক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাইফুলের মা রেবেকা সুলতানা বাদী হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন সাইফুল। পরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার জাহেদুল আলম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আরশাদ আলীকে আসামি করা হয়েছে।
সাভারে দুজনকে গুলি করে হত্যা
রফিকুল ইসলাম (২২) নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রফিকুলের ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর সাভার থানায় এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর সাভার থানার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ মিছিলে হামলা চালায় এবং গুলি ছোড়ে। এতে রফিকুল গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া সাভারে আরিফুর রহমান (৩২) নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরিফুরের ভাই সাইফুর রহমান বাদী হয়ে সাভার থানায় এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাভারের থানা রোডে মিছিলে আরিফুর রহমান অংশ নেন। তখন স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ অন্যরা মিছিলে গুলি চালান। তখন আরিফুর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।