সন্দেহ এড়াতে খোঁজাখুঁজিতে অংশ নেন খুনের আসামিও

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আসামি মোহাম্মদ রুবেলকে
ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণের পর ১০ বছর বয়সী শিশুটিকে খুন করে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে বেরিয়ে যান আসামি। এরপর যান শিশুটির বাড়িতে। স্বজনদের সন্দেহ এড়াতে আসামি নিজেও শিশুটিকে খোঁজেন। গ্রেপ্তারের হওয়ার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানিয়েছেন আসামি মোহাম্মদ রুবেল (৩০)।

চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার একটি ডোবা থেকে আজ বুধবার সকালে ১০ বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পিবিআই। ২১ মার্চ বিড়ালছানা আনতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে পাহাড়তলী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার শিশুটির মা বাদী হয়ে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এতে স্থানীয় সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ রুবেলকে আসামি করা হয়।

পিবিআই জানায়, আসামি রুবেলকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা তাঁর কার্যালয়ে আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন (২১ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিশুটি পাহাড়তলীর কাজীর দিঘির বাসা থেকে বেরিয়ে বিড়ালছানা আনতে গিয়েছিল। তিন মাস আগে শিশুটির বাসার পাশের সবজি বিক্রেতা রুবেল বলেছিলেন তাকে একটি বিড়ালছানা দেবেন। রুবেলের কাছে যাওয়ার পর শিশুটিকে তাঁর আত্মীয়ের চারতলা বাড়ির চারতলায় নিয়ে যান। বাসাটি শিশুটির বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে। চারতলার ফ্ল্যাটটি রুবেল নিজেই দেখাশোনা করতেন। নতুন ভাড়াটিয়া আসার জন্য থাকা ফ্ল্যাটটির চাবি ছিল তাঁর কাছে। শিশুটিকে ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণ করেন ও গলা টিপে হত্যা করেন। এর পরপরই রুবেল ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে বেরিয়ে যান।

নাইমা সুলতানা আরও বলেন, শিশুটিকে হত্যার পর আসামি রুবেল বাসা থেকে বেরিয়ে পাশের চা-দোকানে গিয়ে চা খান। আর দোকানদারকে বলতে থাকেন শিশুটি হারিয়ে গেছে। এরই মধ্যে রুবেলের কাছে ফোন করেন শিশুটির দাদি। তিনি জানতেন, রুবেল তাঁর নাতনিকে বিড়ালছানা দেবেন। ফোন পেয়ে রুবেল শিশুটির দাদিকে জানান, তাঁর কাছে যায়নি শিশুটি। এরপর শিশুটির দাদির কাছে চলে আসেন রুবেল। স্বজনদের সঙ্গে তিনি নিজেও শিশুটিকে খোঁজাখুঁজিতে অংশ নেন।

শিশুটির দাদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামি রুবেল যেভাবে নাতনিকে খুঁজেছে, বিশ্বাসই হচ্ছে না সে–ই খুন করেছে। তাকে যাতে সন্দেহ না করা হয়, সে জন্য খোঁজাখুঁজিতে অংশ নেয়।’

পিবিআই কর্মকর্তা নাইমা সুলতানা জানান, খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রুবেল সন্ধ্যার পর ফ্ল্যাটে আসেন। আসার সময় তাঁর সবজি বিক্রির ভ্যানে থাকা একটি বস্তা নিয়ে আসেন। ফ্ল্যাটের নিচে রাখেন তাঁর ভ্যানটি। বস্তাবন্দী করে শিশুটিকে ভ্যানে সবজি বিক্রির বাক্সে রাখেন। একটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে তার ওপর সবজি রাখেন। লোকজন যাতে সন্দেহ না করে, সে জন্য ভ্যানে লাশ রেখে কয়েকজনের কাছে সবজিও বিক্রি করেন। লোকজনকে বলতে থাকেন শিশুটির খোঁজ পেলে জানাতে। রাত ৯টার দিকে লোকজন কম থাকায় বস্তাবন্দী লাশটি ভ্যান থেকে নামিয়ে পাশের ডোবায় ফেলে দেন। বস্তার ওপর কিছু খড় দিয়ে দেন।

পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, গতকাল রাতে পাহাড়তলী এলাকা থেকে আসামি রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ তাঁকে আদালতে নেওয়ার পর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।