চট্টগ্রামে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক, বর্ধিত ভাড়া নিয়ে চালক-যাত্রীদের বচসা

তেলের দাম বাড়লেও গাড়ি চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তবে গাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে যাত্রীদের চলাচল কমেছে। রোববার সকাল ১০টায় নগরের এ কে খান মোড় থেকে ছবিটি তোলাছবি: জুয়েল শীল

ভাড়া বৃদ্ধির পর চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে সব রুটে বাস, টেম্পো চলাচল করেছে। বর্ধিত ভাড়া আদায় নিয়ে চালক, চালকের সহকারীদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা লেগেই ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

আজ রোববার সকালে নগরের জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শাহ আমানত সেতু, নিউমার্কেট, কোতোয়ালি ও চকবাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগর থেকে গণপরিবহন কার্যত উধাও হয়ে যায়। পরে চলাচল শুরু করলেও পরিবহনশ্রমিকেরা বিভিন্ন মোড়ে বাধা দেন।

আজ রোববার সকাল ৯টায় নগরের আতুরার ডিপো থেকে টেম্পো করে মুরাদপুরে আসেন আলআমিন। গাড়িতে ৫ টাকা ভাড়া দেন তিনি। কিন্তু চালক দাবি করে বসেন ১০ টাকা। শেষ পর্যন্ত ১০ টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে চালকের সঙ্গে কিছুক্ষণ তর্কাতর্কিও হয় তাঁর। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে অতিষ্ঠ আলআমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গেছে ভাড়া। মুরাদপুর থেকে কর্মস্থল কালুরঘাটে যেতে বাস ভাড়া লাগত ৬ টাকা। এখন সেটি নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। এভাবে যদি সবকিছুর দাম বেড়ে যায়, তাহলে কী করব? বেতন তো বাড়ছে না।

নগরের কোতোয়ালি মোড়ে কথা হয় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। মামলার কাজে চট্টগ্রাম আদালতে আসেন। তিনি বলেন, রাঙ্গুনিয়া থেকে শহরে বাসে আসতে আগে ভাড়া লাগত ৬০ টাকা। আজকে নিয়েছে ৭০ টাকা। বহদ্দারহাট থেকে কোতোয়ালি মোড়ে টেম্পো ভাড়া ছিল ১০ টাকা। তা–ও নিচ্ছে ১৫ টাকা। কোনোভাবে কম নিতে রাজি না চালকেরা। তাঁদেরও কিছু করার নেই। একলাফে তেলের দাম এত বেড়েছে, যা অকল্পনীয়।

নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে ভাড়া নিয়ে যাত্রীর সঙ্গে বচসা লেগেই ছিল টেম্পোচালক তাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, তাঁরা বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত রুটে গাড়ি চালান। এই রুটে ভাড়া ছিল ১০ টাকা।

এখন করা হয়েছে ১২ টাকা। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে রাজি হচ্ছে না। এখন এই টাকা না নিলে গাড়ি চালিয়ে তেল খরচ আর মালিককে দেওয়ার পর কোনো টাকা থাকবে না। তবে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাই তাঁরা প্রতিবাদ করছেন।

জানতে চাইলে সিটি বাস ওনার্স বাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তরুণ দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, আজ গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কিছুটা কথা–কাটাকাটি হচ্ছে। যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছেন না। তবে দু-এক দিন গেলে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলের চাহিদা কমে গেছে। গতকাল তাঁরা অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের কাছ থেকে।

চকবাজারে কথা হয় দুই মোটরসাইকেল চালক আজিম উদ্দিন ও আরাফাত হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, যে হারে তেলের দাম বাড়ছে, তাতে ১০০ টাকার ভাড়া ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু যাত্রীরা অত টাকা দিয়ে যেতে রাজি নন। ওই টাকায় বরং অটোরিকশা করে চলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় যাত্রীদের কাছে বিকল্প আছে। এ কারণে সকাল থেকে ভাড়া পাচ্ছেন না তাঁরা।