মাদ্রাসাছাত্রের খোঁজ নেই ৪১ দিন, দিশাহারা মা-বাবা

নাঈম শেখ, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার এই মাদ্রাসাছাত্রের খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার
ছবি: সংগৃহীত

নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় ৪১ দিন ধরে এক মাদ্রাসাছাত্রের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও সন্তানের সন্ধান না পাওয়ায় বাবা-মায়ের পাগলের মতো অবস্থা হয়েছে।

নিখোঁজ ওই মাদ্রাসাছাত্রের নাম নাঈম শেখ (১৪)। সে কালিয়ার বাঁকা গ্রামের মো. নূর ইসলাম শেখের ছেলে। কালিয়া শামসুল উলুম খাদেমুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসার প্রথম জামাতের ছাত্র সে।

পরিবার জানায়, গত ২ জুন বিকেলে মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে একা বের হয় নাঈম। দুই দিন পর মাদ্রাসা থেকে খবর পাঠানো হয় যে নাঈম মাদ্রাসায় কেন আসছে না। এর পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় গত ১০ জুন কালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন নাঈমের মা নাছিমা বেগম। তবে পুলিশ এখনো নাঈমের বিষয়ে তাঁদের কিছু জানাতে পারেনি।

জানতে চাইলে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ তাসমীম আলম মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি, নাঈম খুবই ডেসপারেট ছেলে। এর আগেও চার-পাঁচবার সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে আবার ফিরে এসেছিল। যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, সে নিজে থেকেই চলে গেছে।’ এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, সে (নাঈম) ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে। বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো নয়। অভিভাবকেরা তার ওপর খেয়ালও ঠিকমতো রাখেননি।

এখনো ছেলের সন্ধান না পাওয়ার জন্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাঈমের বাবা নূর ইসলাম। পেশায় কৃষক নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন (২ জুন) সন্ধ্যার পরই নাঈম মাদ্রাসায় পৌঁছে গিয়েছিল বলে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা আমাদের জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সন্ধ্যার পর দেখা গেলেও এশার সময় থেকে তার আর খোঁজ ছিল না। কিন্তু পরে তাঁরা বলেছেন, নাঈম ওই দিন মাদ্রাসাতেই যায়নি। আমরা মাদ্রাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাইলে তাঁরা দেখাননি। পুলিশ মাদ্রাসার শিক্ষকদের জিজ্ঞসাবাদ না করে উল্টো তাঁদের কথামতো সবকিছু করছে।’

মাদ্রাসা থেকেই তাঁর ছেলের কিছু হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন নূর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ঠিকভাবে তদন্ত করলে আমার ছেলের খোঁজ পাওয়া যেত। এই কওমি মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক হয়তো আমার ছেলেকে লুকিয়েছেন বা অন্য কিছু করেছেন।’

এ অভিযোগের জানতে চাইলে মাদ্রাসার মোহতামিম মুফতি শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটি তিন বছর আগে তাঁদের মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল। সে পড়াশোনায় ততটা মনোযোগী ছিল না। মাঝেমধ্যে কয়েক দিনের জন্য মাদ্রাসা থেকে চলে যেত। আবার ফিরে আসত। ২ জুন বিকেলে সে বাড়ি থেকে কালিয়ায় এসে মাদ্রাসায় আসেনি। ওই দিন সন্ধ্যায় কালিয়া মডেল মাদ্রাসায় সে অজু করে। তখন মাদ্রাসার এক ছাত্রের সঙ্গে দেখা হলে সে তাকে জানায়, মাদ্রাসায় ফিরবে না। কিছুক্ষণ পর পাশের বেন্দা মসজিদের ইমামের কাছে গিয়ে থাকতে চায়। কিন্তু ইমাম তার বাড়ির খোঁজখবর নিতে চাইলে সে পালিয়ে যায়।

ছেলেটিকে খুঁজে পেতে নিজেও চেষ্টা করছেন জানিয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক জায়গায় গিয়েও তার কোনো খবর পাইনি। এখন মনে হচ্ছে, ছেলেটিকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাটাই আমার ভুল হয়েছিল।’