সংসদে সংরক্ষিত আসন চায় দলিত সম্প্রদায়
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন চায় দেশের প্রান্তিক দলিত সম্প্রদায়। পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলিতদের জন্য আসন সংরক্ষণেরও দাবি জানানো হয়েছে। না হলে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে উঠে আসা সম্ভব না। জাতীয় দলিত সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
আজ সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দলিত সংস্থার নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার দাস। তিনি দলিত জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার বাস্তবতা তুলে ধরেন। এ ছাড়া বৈষম্যমূলক আইন বাস্তবায়ন এবং সংসদে দলিত নারীদের জন্য অগ্রাধিকারমূলক আসন নিশ্চিত করার দাবি জানান।
দলিত সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক মিনা দাস মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে ১২টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী আইন তৈরি, রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে দলিতদের রাখা, বাজেটে দলিতদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা, খাসজমি বরাদ্দে দলিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া, দলিতদের বেকারত্ব নিরসনে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, সরকারি ও আধা সরকারি দপ্তরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজে অন্তত ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে দলিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ, চা–শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়ানো এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও চা–শ্রমিক দলিতদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল হাসনাত। তিনি বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজের নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নিবেদিত। তাদের দায়িত্ব হলো সমাজের দুর্বল মানুষদের রক্ষা করা।
এরপর ‘ব্যবস্থাগত বাধা দূরীকরণ: নীতি ও অনুশীলনে দলিত অধিকার’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ উইমেন্স লিবারেশন কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট সীমা দাও বলেন, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। তাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বলা হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দেবাশিষ কুমার কুন্ড বলেন, দলিতদের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তর থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে হবে। এই সম্প্রদায়ের সমস্যা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ লালা বলেন, ‘আমাদের আইনগুলো কাগজে আছে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ নেই। তাই এখন চর্চায় আনা জরুরি।’
বেসরকারি সংস্থা দলিতের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘দলের যুবকদের সংগঠিত করা একটি চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা তাদের একত্র হতে কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন গঠন ও নিবন্ধন করার পরামর্শ দিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এইচ ই আন্টোনিও আলেসান্দ্রে বলেন, ‘দলিত জনগোষ্ঠী তাদের দাবিদাওয়া উত্থাপন করছে, যা খুবই ভালো। প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলে সমস্যার সমাধানে আইন বাস্তবায়ন ও সংস্কৃতি অনুসরণ প্রয়োজন।’
সম্মেলেন আরও বক্তব্য দেন হরিজন ঐক্য পরিষদের সদস্য পংকজ বাসফোর, বেসরকারি কর্মী নুজহাত জাবিন, ডিএফএর পরিচালক আদিব ওয়াকার, জিআইজেডের প্রধান মার্টিনা বার্কার ও জার্মান ডক্টরসের কান্ট্রি ডিরেক্টর গোর্কি গৌরাব।