ডিসিদের হইচইয়ে বিব্রত হলেও বিচলিত নয় ইসি: রাশেদা সুলতানা

নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) হইচইয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিব্রত হলেও বিচলিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, এ রকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে তা তাঁরা চিন্তা করতে পারেননি।

আজ সোমবার নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদিকে আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

জেলা পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে গত শনিবার সব জেলার ডিসি ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। ওই সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান ডিসিরা। এ সময় হট্টগোল তৈরি হয়। পরে আনিছুর রহমান আর বক্তব্যই দেননি।

এ ঘটনায় কমিশন বিব্রত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আজ নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিব্রত তো বটেই, কারণ এ রকম একটা ঘটনা কে চায়? মাথার মধ্যেই তো আনতে পারি নাই, ওই রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে। যেটা গেছে গেছে ওটা নিয়ে আমরা এত বিচলিত না। বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’

রাশেদা সুলতানা বলেন, ডিসিদের হইচই করাটা ঠিক হয়নি। এ রকম পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে ভালো হতো। কিন্তু এটার মধ্য দিয়ে সবকিছু ভেস্তে গেছে, ইসি তাদের আয়ত্তে আনতে পারবে না, তিনি এটা মনে করেন না।

আরও পড়ুন

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘যে উত্তপ্ত হয়েছিল, হয়তো কথার প্রেক্ষাপটটা ওনাদের ভালো লাগে নাই, আমার কাছে মনে হয়েছে। যে প্রসঙ্গ নিয়ে হঠাৎ উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হলো, প্রসঙ্গগুলো যে খুব মিথ্যে তা কিন্তু না। প্রসঙ্গগুলো যে আমাদের সমাজে নাই তা কিন্তু না। প্রসঙ্গগুলো সত্য। হয়তো বলার ধরনটা ওনারা (ডিসি) নিতে পারেন নাই। একটা বিচ্ছিন্ন বিষয় নিয়ে রি–অ্যাক্ট করার মানেই এই না যে ওনারা সার্বিক দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন। ওনারা বলেছেন ইসি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে কাজ করবে।’

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের ‘পলিসির’ ব্যাপার।

ডিসি, এসপিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য নিয়ে ডিসিদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মতবিনিময় সভায় আসা প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবার মতামত শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পিকনিকের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পিকনিকে গেলে কেউ বলবেন বিরিয়ানি খাব, কেউ বলবেন পোলাও খাব। কেউ বলবেন যে রোস্ট করলে ভালো হয়, কেউ বলবেন ওটা করলে ভালো হয়। তারপরে একটা ডিসিশন হলে তো পিকনিকে যান, আনন্দ, ফুর্তি করেন। এটাও ঠিক ওই রকম। এটাও একটা টিম বিল্ডিংয়ের কাজের মতো। এখানে নানাজনের নানা মত থাকবে। একজন বলবেন এটা করলে ভালো হয়, আরেকজন বলবেন ওটা করলে ভালো হয়। তারপরে সবার কথা শুনে সিদ্ধান্ত হবে। সেই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিতে বাধ্য হবে।’

গত শনিবার নির্বাচন ভবনে ডিসি, এসপিদের সঙ্গে ওই মতবিনিময় সভা হয়েছিল। সভা সূত্র জানায়, বক্তব্যের একপর্যায়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, কর্মকর্তারা নানা সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের যে তেল খরচ দেওয়া হয়, সেটাও অনেক সময় তাঁদের (ম্যাজিস্ট্রেট) কাছে পৌঁছায় না। তখন বেশ কয়েকজন ডিসি এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। এ সময় কিছুটা হট্টগোলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন আনিছুর রহমান বলেন, তিনি তথ্য-প্রমাণ নিয়েই কথা বলছেন। যদি কর্মকর্তারা তাঁর বক্তব্য শুনতে না চান, তাহলে তিনি বক্তব্য দেবেন না। কর্মকর্তারা তাঁর বক্তব্য শুনতে চান কি না, এমন প্রশ্ন রাখলে কেউ কেউ ‘না’ সূচক জবাব দেন। তখন বক্তব্য বন্ধ করে দেন আনিছুর রহমান।