চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে প্রতিদিন সেন্ট মার্টিন পরিবহনের চারটি বাস ছেড়ে যায়। তবে আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি বাসও ছেড়ে যায়নি। আগের দিন শুক্রবার একটি বাস ছেড়ে গেলেও তা শেষ পর্যন্ত ঢাকা যেতে পারেনি। কুমিল্লা থেকে আর ঢাকায় যেতে দেওয়া হয়নি।
শুধু সেন্ট মার্টিন পরিবহন নয়, অন্যান্য কোম্পানির দূরপাল্লার বাসও খুব কম চলাচল করেছে। অনেক পরিবহন কোম্পানির গাড়ি চলাচল করেনি। গাড়ি চলাচলের এই অবস্থার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। জরুরি প্রয়োজনেও গন্তব্যে যেতে পারেননি তাঁরা।
পরিবহন কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের কারণে গাড়ি চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এই সমাবেশ ঘিরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। ঢাকায় যাওয়ার পথে কোথাও কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় কি না, আবার ঢাকায় গেলে কোথায় উঠবেন, সেখানের পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল। তাই প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম ছিল। তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গন্তব্যে রওনা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। এতে যাত্রীর চাপও কমে যায়। যাত্রী না থাকায় গাড়ি বের করা হয়নি।
পরিবহনের কোম্পানির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে গাড়ি চলাচল সীমিত করা বা না চালানোর বিষয়ে কারও কোনো নির্দেশনা তাঁদের ওপর ছিল না।
তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাস চলাচল কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বিকেলে অনেক যাত্রীকে কাউন্টারে কাউন্টারে টিকিটের জন্য ঘুরতে দেখা গেছে। এ রকম চারজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কারও পারিবারিক প্রয়োজন, কারও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঢাকায় যাওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাস নেই। তাই যাত্রা বাতিল করা ছাড়া উপায় ছিল না।
চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়া, অলংকার মোড়, এ কে খান গেট ও বিআরটিসি এলাকা থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু বিকেলে এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারের সামনের রাস্তা ছিল ফাঁকা। অন্যান্য দিনে এই সময়ে এসব এলাকায় সারিবদ্ধ হয়ে বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রির বিষয়ে কর্মীদের হাঁকডাক নিয়মিত ঘটনা। তবে আজ কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর ভিড় ছিল না। কোনো কোনো কাউন্টার ছিল একেবারে ফাঁকা। আবার কিছু কিছু কাউন্টারে যাত্রী ছিল হাতে গোনা।
নগরের দামপাড়ায় গ্রিন লাইন বাসের কাউন্টার ছিল যাত্রীশূন্য। কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে আটটি বাস ঢাকায় যায়। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি বাসও ছেড়ে যায়নি। এর আগের দিন শুক্রবার মাত্র দুটি বাস ছেড়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে সন্ধ্যা ছয়টার বাসে যাত্রী ছিলেন মাত্র তিনজন এবং বিকেল সাড়ে চারটার বাসে ছিলেন মাত্র সাতজন।
সৌদিয়া পরিবহনের তত্ত্বাবধায়ক জুয়েল দাশ গুপ্ত বলেন, প্রতিদিন তাঁদের কাউন্টার থেকে ২৫টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস এবং ৪৫টি নন–এসি বাস ঢাকাসহ সারা দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু শুক্রবার খুব কম বাস ছেড়ে গেছে। আবার গাড়িগুলোতে অর্ধেকের বেশি আসন ছিল ফাঁকা। যাত্রী কম থাকায় অনেক গাড়ির যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। শনিবারও তাঁদের কাউন্টার থেকে মাত্র একটি বাস ছেড়ে গেছে।
নগরের দামপাড়া থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাস দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এসব বাসে যাত্রীর চাপও থাকে বেশি। কিন্তু শুক্র ও শনিবার তেমন কোনো চাহিদা ছিল না। তাই বাস বের করা হয়নি বলে জানান পরিবহনের বিক্রয় নির্বাহী অসীম ঘোষ। তিনি বলেন, তাঁদের কাউন্টার থেকে এক ঘণ্টা পরপর গাড়ি ছেড়ে যায়। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি গাড়ি ছেড়ে গেছে, তা–ও বেনাপোলের উদ্দেশে। শুক্রবার কিছু টিকিট বিক্রি করা হলেও পরে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় গাড়ি চালানো হয়নি। পরে ফোন করে যাত্রীদের বিষয়টি জানানো হয়। টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ যাত্রার তারিখ পরিবর্তন করেছেন।