বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা নেই, শিশুর কান্নায় বিব্রত মায়েরা

বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা না থাকায় সন্তানকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন মায়েরা
ছবি: প্রথম আলো

কোলে ১১ মাসের শিশু। কিছুক্ষণ পরপর কাঁদছে শিশুটি। মা শিরিন আক্তার শান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। কারণ, সেই সকালে মায়ের সঙ্গে আদালতে এসেছে সে। দুপুর গড়ালেও শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না মা।

চট্টগ্রাম আদালতের অ্যানেক্স ভবনের নিচতলার বারান্দায় মানুষের ভিড়। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর জায়গা (ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার) নেই। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা হয় বিব্রত শিরিন আক্তারের সঙ্গে।

চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি মোড় এলাকায় আদালত ভবনের কাছাকাছি অ্যানেক্স ভবনে শুধু শিরিন আক্তারই নন, আরও অনেক মাকেই এমন দুর্ভোগে পড়তে দেখা যায়। সন্তানকে রেখে আসার মতো পরিস্থিতি নেই, তাই সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই দূরদূরান্ত থেকে আসেন মায়েরা।

তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসা বিচারপ্রার্থীদের বেশির ভাগই নারী
ছবি: প্রথম আলো

আদালত সূত্রে জানা যায়, চারতলা ওই ভবনে ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ ১৫টি আদালত রয়েছে। এসব আদালতে প্রতিদিন গড়ে অর্ধসহস্রাধিক বিচারপ্রার্থী আসেন। বিশেষ করে ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসা বিচারপ্রার্থীদের বেশির ভাগই নারী। ভবনটির নিচতলায় অবস্থিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৬। বর্তমানে সেখানে মামলা রয়েছে ৩৩৪টি।

তবে চট্টগ্রাম আদালতের নতুন ভবনে বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা রয়েছে। এই ভবনে পারিবারিক আদালত রয়েছে। সেটা অ্যানেক্স ভবন থেকে দূরে।

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে আসা মামলার বাদীদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। যার মধ্যে শিশুসহ মায়ের সংখ্যা বেশি। এসব মা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে দুর্ভোগের শিকার হন। এই ভবনে অন্তত দুই থেকে তিনটি বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা স্থাপন করা উচিত।

ভবনটির তৃতীয় তলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৫ ও ৬ অবস্থিত। দুটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে ২ হাজার ৯৯৫টি মামলা।

দুটি ট্রাইব্যুনালের সামনের বারান্দায় বিচারপ্রার্থী নারী, পুরুষের ভিড়। আর বেশির ভাগ নারীদের কোলে রয়েছে শিশু। নগরের চান্দগাঁও থানার একটি ধর্ষণ মামলার বাদী ২২ বছর বয়সী এক নারী। তাঁর কোলে দুই বছরের শিশু। ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার সাক্ষ্য দিতে এসেছেন তিনি। ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

ভবনটির তৃতীয় তলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–১ সরকারি কৌঁসুলি জেসমিন আক্তারের কার্যালয়। নিজ কার্যালয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিশুসহ মায়েদের দুর্ভোগ দেখে তাদের নিজ কার্যালয়ে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ করে দিই। অনেক সময় শিশুর কান্না দেখে মায়েরাও অনুরোধ করেন সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এতে কাজের ব্যাঘাত ঘটলেও যথাসাধ্য চেষ্টা করি। কিন্তু এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরে একটি করে বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা থাকা জরুরি।

প্রতিবছর ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ২০১০ সাল থেকে জাতীয়ভাবে এই সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এবার এই সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘কর্মজীবী মা-বাবার সহায়ক পরিবেশ গড়ি, মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করি।’ তবে শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, সব পরিস্থিতিতেই মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করতে বন্দোবস্ত থাকা দরকার।

আদালতে যত দ্রুত সম্ভব বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির এনামুল হক আখন্দ। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

ফেরা যাক সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়া শিরিন আক্তারের কাছে। নগরের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়ন থেকে আদালতে এসেছেন তিনি। স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা করেছেন তিনি। সেই মামলার খোঁজ নিতে আদালতে এসেছেন।

শিরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সকালে বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে আদালতে এসেছেন। কিন্তু এখানে এত মানুষের ভিড়ে কিছুতেই ১১ মাসের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না। শিশুর কান্না সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেন, কিন্তু বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন।

শিরিন আক্তার আরও বলেন, এখানে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আলাদা জায়গা থাকলে আদালতে আসা তাঁর মতো মায়েরা কিছুটা স্বস্তি পেতেন।