দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিড় বেড়েছে ‘হলিডে মার্কেটে’

হলিডে মার্কেটে স্টল ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

সকাল থেকেই বন্ধুবান্ধব, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হলিডে মার্কেটে আসছেন ক্রেতারা। স্টল ঘুরে দেখছেন, কেউ কেউ কেনাকাটা করছেন। অবশ্য বেলা একটার দিকেও উদ্যোক্তারা না আসায় বেশ কিছু স্টল খালি ছিল।

দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিন আজ শুক্রবার হলিডে মার্কেটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি ও ঐক্য ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে গত সপ্তাহে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডিএনসিসি-ঐক্য হলিডে মার্কেট চালু হয়।

আশপাশের দোকানিরা বলছেন, শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সাধারণত বিকেলে এখানে মানুষের ভিড় হতো। সকালে তেমন একটা মানুষজন আসতেন না। মার্কেট চালু হওয়ায় আজ সকাল থেকেই আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ দল বেঁধে এখানে আসছেন।

মার্কেটে পণ্য নিয়ে আসা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উদ্যোক্তারা বলছেন, তাঁরা ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছেন। যাঁরা আসছেন, তাঁদের বেশির ভাগই মার্কেট ঘুরে দেখছেন। অনেকে পণ্য আর দাম পছন্দ হলে কিনেও নিচ্ছেন।

এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে গত শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘হলিডে মার্কেট’ চালু হয়। আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরের পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে হলিডে মার্কেট বসছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে বড় বড় ছাতার নিচে সারি সারি স্টল। এসব স্টলে চামড়াজাত, পাটজাত, পোশাক, সাজসজ্জা ও গৃহসজ্জার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো স্টলে খাদ্যপণ্য নিয়ে এসেছেন উদ্যোক্তারা। এসবের মধ্যে নানা ধরনের পিঠা, মিষ্টি, চিপস, পপকর্ন রয়েছে।

এ ছাড়া ভাজাপোড়া থেকে শুরু করে বার্গার, স্যান্ডউইচ, ফুচকা, চটপটিও রয়েছে কিছু স্টলে। আছে গাছের চারা ও রাসায়নিক সারবিহীন শাকসবজির স্টল। কোনো কোনো উদ্যোক্তা আবার কারুশিল্প বা হস্তশিল্পের নানা পণ্য এনেছেন।

একটি স্টলে বিছানার চাদর দেখানো হচ্ছে ক্রেতাকে
ছবি: প্রথম আলো

মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে হলিডে মার্কেটে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আসলাম উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কেটে এসে ভালোই লাগছে। এখানে পণ্যের মান রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানের দোকানগুলোর চেয়ে ভালো।’ তবে দাম কিছুটা বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আসলাম উদ্দীন তাঁর স্ত্রীর জন্য বাটিকের নকশা করা একটি শাড়ি ও দুই মেয়ের জন্য দুটি ওয়ান–পিস কিনেছেন বলেও জানান। আর নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি কেনার ইচ্ছে আছে জানিয়ে মজার ছলে বলেন, হলিডে মার্কেটের ছেলেদের পণ্যের স্টল খুবই কম। মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি এ দিকে নজর দিতে পারে।

আয়োজকেরা বলেন, দ্বিতীয় সপ্তাহেও ১০০ উদ্যোক্তা স্টল বরাদ্দ নিয়েছেন। তবে বেলা একটা পর্যন্ত মার্কেটের ৪২টি স্টল ফাঁকা দেখা গেছে।

হলিডে মার্কেটে হাতে আঁকা ও নকশিকাঁথার মোড়কে তৈরি বিভিন্ন ধরনের নোটবুক নিয়ে এসেছেন উদ্যোক্তা শারমীন লাবনী। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম শিল্পলোক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাতে আঁকা নোটবুকের কাভার ২৫০ এবং নকশি কাঁথার কাভারের নোটবুক ৭৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ব্লক প্রিন্ট ও নকশা করা টি-শার্ট বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়।

গত সপ্তাহে হলিডে মার্কেটে দুদিনে প্রায় দুই লাখ টাকার বিক্রি হয়েছিল উদ্যোক্তা নিতাই সরকারের। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম অর্থা। সর্বোচ্চ বিক্রেতা হিসেবে আয়োজকদের কাছ থেকে সম্মাননা স্মারকও পেয়েছেন তিনি। ক্রেতাদের ভালো সাড়া পেয়ে আজও মার্কেটে এসেছেন।

নিতাই সরকারের স্টলে মশারি, ফাইবারের বালিশ, শিমুল তোলার বালিশ, কমফোর্টার, বিছানার চাদর ইত্যাদি পাওয়া যায়। দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি রিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজও সকাল থেকে ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। ইতিমধ্যে কিছু বিক্রিও হয়েছে।’

নিতাই সরকারের স্টলে ভালো মানের সুতার তৈরি মশারি ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, ফাইবারের বালিশের জোড়া ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কমফোর্টার ১ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। শিমুল তুলার দুই আকারের বালিশ রয়েছে। ১৮/২৪ ইঞ্চি আকারের বালিশ প্রতিটি ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ১৮/২৬ ইঞ্চির বালিশ প্রতিটি ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।

মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে গাছের চারাও
ছবি: প্রথম আলো

হলিডে মার্কেটের বেশির ভাগ উদ্যোক্তার স্টলেই রয়েছে নারীদের জন্য পোশাক, জুতা, ব্যাগ প্রভৃতি। নীলা বাটিকের উদ্যোক্তা নীলা তাবাসুমের স্টলেও বেশির ভাগ পণ্য নারীদের। এসবের মধ্যে রয়েছে মণিপুরি তাঁত ও জামদানি শাড়ি, জামদানি শাল, ব্লক প্রিন্টের ওয়ান–পিস। ছেলেদের জন্য শুধু রয়েছে ব্লক প্রিন্টের পাঞ্জাবি।

নীলা তাবাসুম বলেন, হলিডে মার্কেটের ধারণা এ দেশে নতুন। এখানে বিভিন্ন উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন। তবে ক্রেতাদের অনেকে এটাকে নিউমার্কেট কিংবা গাউছিয়া মনে করছেন। বিষয়টি ক্রেতাদের বুঝতে কিছু সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্যোক্তারা অনেক পরিকল্পনা করে, যত্ন নিয়ে কাজ করি। এতে আমাদের পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়। ফলে দাম কিছুটা বেশি মনে হয়।’

তবে মার্কেটে আসা ক্রেতা ও উদ্যোক্তা দুপক্ষই মনে করে, আয়োজকদের শৌচাগার ব্যবস্থাপনায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া অন্তত দুটি স্টলের মাঝখানে একটি করে ময়লা ফেলার বিন দেওয়া প্রয়োজন। এতে আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার থাকবে।

একজন নারী উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে বলেন, শৌচাগারের ব্যবস্থা সড়কের উত্তর প্রান্তে রাখা হয়েছে। সেটাও অপরিষ্কার। এখানে উদ্যোক্তা ও বিক্রয়কর্মীদের অনেকে নারী। ক্রেতাদের মধ্যেই অনেক নারী আসেন। শৌচ কাজে নারীদের সমস্যা হচ্ছে।
আয়োজকেরা বলছেন, হলিডে মার্কেটে আসা ক্রেতাদের জন্য আজ সন্ধ্যায় নজরুলসংগীতের আয়োজন করা হয়েছে। আর আগামীকাল শনিবার থাকবে রবীন্দ্রসংগীতের আয়োজন। হলিডে মার্কেটের বিদ্যমান অসুবিধাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা চলছে।