প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনাটি দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেছেন, পরমতসহিষ্ণুতা গড়ে না উঠলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারবে না। বরং সামনের দিনগুলোয় আরও কঠিন হতে পারে।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়ার এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানাতে এসে এ কথা বলেন তিনি। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)।
সভায় মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্র্যাকটিসে আমরা যে অনেকখানি পিছিয়ে আছি, এই সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই; সেখানে যেই সরকারই হোক, ইন্টারিম গভার্নমেন্ট, কেয়ারটেকার গভার্নমেন্ট অথবা রেগুলার গভার্নমেন্ট।’
সব সরকারের সময়ই দেশে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত আসে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মতের পার্থক্য যদি আমরা টলারেট (সহ্য) করতে না পারি, তাহলে কিন্তু সামনের দিনে আরও আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘আমাদের ডেইলি স্টার, প্রথম আলোকে...পোড়ায় দেওয়া হলো কেন? যেহেতু তারা বিভিন্ন অভিমতগুলো ব্যক্ত করে এবং তারা পার্টিকুলার কারও স্পোকসপারসন নয়। কারও ব্যক্তিগত কোনো...মানে দলের বা মতের পক্ষে নয়। তারা ইনডিপেনডেন্ট জার্নালিজম করার চেষ্টা করেছে এবং করছে।’
বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের প্রবণতা তুলে ধরে আইসিসির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দেশে বা আরও হয়তো কিছু দেশ আছে, যেখানে গণতন্ত্রের অর্থ হলো—আমি যা বলব, সেটাই গণতন্ত্র; তার কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। তার বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। বিরূপ মন্তব্য করলে তাঁকে খুন, গুম এবং বিভিন্নভাবে সেই মতবাদ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে।’
এ বক্তব্যের সমর্থনে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের কথা বলেন মাহবুবর রহমান। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের কথাও বলেন তিনি।
এই প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি জানাতে আসেন। প্রতিবাদ সভা শেষে সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। একই রাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়েও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়। খবর পেয়ে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে গিয়ে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর হেনস্তার শিকার হন।