পাঁচ দিন পর নির্বাচন, এখন পর্যন্ত ভোটের প্রচারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
আরিফুজ্জামান: আমরা শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। সবাই পরিবর্তনের রাজনীতির কথা বলে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন।
আপনারা কী ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?
আরিফুজ্জামান: দীর্ঘ ৩৩ বছর জাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর সিনেট অধিবেশনে পৌঁছাত না। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়াগুলো সিনেটে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছি।
শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের সমস্যার কথা বেশি বলছেন?
আরিফুজ্জামান: শিক্ষার্থীরা অনেক সমস্যার কথাই বলছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেশনজট এবং কিছু কিছু বিভাগে শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। অনেক বিভাগে শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্রে সিজিপিএর একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কম সিজিপিএধারী শিক্ষার্থীও গবেষণায় ভালো করতে পারেন। তাহলে কেন গবেষণার ক্ষেত্রে সিজিপিএ মুখ্য হয়ে উঠবে? এ ছাড়া মানসম্মত খাবার, অভ্যন্তরীণ পরিবহনব্যবস্থার সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা বলছেন।
ফেসবুকে নারীদের বিভিন্নভাবে বুলিং ও হয়রানি করা হচ্ছে, এটাকে কীভাবে দেখেন?
আরিফুজ্জামান: এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা অগ্রভাগে ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নারীদের রাজনীতি আসার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং অনলাইন ও অফলাইনে যে হেনস্তা করা হয়—আমরা বিজয়ী হই আর না হই, তা চিরতরে দূর করার ব্যবস্থা করব। জাহাঙ্গীরনগর হবে নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাস।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, কেউ কেউ সংগঠন থেকে পদত্যাগও করেছেন। কারণ কী?
আরিফুজ্জামান: সংগঠনের অর্গানোগ্রাম অনুসারে সদস্যদের আলোচনার ভিত্তিতে যে পদে যাঁকে অধিকযোগ্য মনে করা হয়েছে, সে পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটি পদে একাধিকজন আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের ভিন্ন পদের জন্য চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সংগঠন থেকে বের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এটা কোনো সাংগঠনিক ‘অ্যাপ্রোচ’ হতে পারে না। এটা আমাদের ওপর কোনো চাপ তৈরি করেনি। আমরা একটি সুন্দর প্যানেল দিতে পেরেছি।
বিষয়টিকে আপনাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মনে করেন কি?
আরিফুজ্জামান: আমরা এটিকে কোনো কোন্দল হিসেবে দেখছি না এই কারণে যে আমরা কোনো অফিশিয়ালি পদত্যাগপত্র পাইনি। একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, আরেকজন আমাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। তবে আমাদের মধ্যে সম্পর্কের জায়গায় কোনো ফাটল ধরেনি। যেহেতু আমাদের সংগঠনের সবাই গণ-অভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ। এখানে এক পদে একাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী ছিলেন। আমরা বলেছি, সবাই সবার জায়গা থেকে নির্বাচন করুক, যদি নিজ যোগ্যতায় তাঁরা জিতে আসতে পারেন, তাহলে তাঁদের আমরা স্বাগত জানাব।
তাঁদের বিদ্রোহ আপনাদের নির্বাচনে প্রভাব পড়বে কি না?
আরিফুজ্জামান: এখন পর্যন্ত এমন কোনো আশঙ্কা আমরা দেখছি না। আমাদের সংগঠনের যে ভোট, সেখানে এটা প্রভাব ফেলবে না। কারণ, আমাদের সংগঠনের সদস্যরা সংগঠন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাকেই সমর্থন জানিয়েছেন এবং আমাদের মনোনীত প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। সামগ্রিকভাবেও শিক্ষার্থীদের ভোটদানের ক্ষেত্রে বিষয়টি সেভাবে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করি।
ভোট টানতে আপনারা কী কী কৌশল নিচ্ছেন?
আরিফুজ্জামান: ভোট টানার জন্য আমরা আমাদের প্যানেল ঠিক করার সময় গণ-অভ্যুত্থানের সময় যাঁরা সামনে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছেন, তাঁদের রাখার চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের প্যানেলে রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্যানেলে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষদের রাখার ক্ষেত্রে। সংগঠনের বাইরেও আমাদের সবার ব্যক্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সার্কেলের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে।
জয়ের ব্যাপারে আপনারা কতটা আশাবাদী?
আরিফুজ্জামান: জয়ের ব্যাপারে আমরা অনেকটাই আশাবাদী। আমরা সব সময় ডানপন্থা ও বামপন্থার বাইরে মধ্যম পন্থায় রাজনীতি করতে চাই। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করে গেছি। শিক্ষার্থীদের একটি চাওয়া ছিল একাডেমিক এরিয়া এবং হল রাজনীতিমুক্ত থাকবে, আমরা তাঁদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সেই জায়গাগুলোকে রাজনীতিমুক্ত রেখেছি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আমরা সব সময় কাজ করে গেছি। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের পক্ষে রায় দেবেন।
আপনাকে ধন্যবাদ
আরিফুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ