সমস্যা মেটাতে বিভাগগুলোতে আছে ছাত্র উপদেষ্টা, জানে না অনেক শিক্ষার্থী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বিভাগ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুজন শিক্ষককে ছাত্র উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মুখ্য ভূমিকা পালন করার কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশির ভাগ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানেন না। বিভাগে কারা এই ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন, তা–ও জানেন না অনেকে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জার গ্রুপে বর্তমান এক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, ‘বিভাগে ছাত্র উপদেষ্টা আছে নাকি?’ পরে সেই প্রশ্নের উত্তর দেন ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিক। যিনি বিভাগটির শিক্ষার্থী। কমবেশি একই অবস্থা অন্যান্য বিভাগেও।

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রতিটি বিভাগে ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। তাঁরা দায়িত্ব পালনের জন্য বিধি মোতাবেক ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি পাচ্ছেন।

ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব ইনস্টিটিউট, বিভাগের একাডেমিক কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে একজন করে পুরুষ ও নারী শিক্ষক ছাত্র উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন। সেই শিক্ষক যদি অন্য কোনো প্রশাসনিক পদে নিয়োজিত থাকেন, তাহলে এই পদে নিযুক্ত হতে পারবেন না। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠাভ্যাস, গ্রহণযোগ্য আচরণ, সামাজিক সচেতনতা, ব্যক্তিগত আচরণে আবেগকে নিয়ন্ত্রিত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতাসহ নানা দায়িত্ব পালন করবেন। পদের মেয়াদ দুই বছর।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেক বিভাগেই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীরা ভয়ে আসেন না। আবার কখন ছাত্র উপদেষ্টাদের কাছে আসা যাবে, এর কোনো নির্দিষ্ট সময়ে থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীরাও খুঁজে পান না সে শিক্ষকদের। এতে ভোগান্তি বাড়ে শিক্ষার্থীদের।

বাংলা ও ইতিহাস বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিভাগের দায়িত্বরত ছাত্র উপদেষ্টার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা বিষয়টি জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানান। ছাত্র উপদেষ্টাদের থেকে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়, সে বিষয়ে তাঁরা অবগত নন। এই শিক্ষার্থীরা তাঁদের পরিচয় জানাতে চাননি।

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে ছাত্র উপদেষ্টা নেই বলে জানা যায়। এই বিভাগের শিক্ষক জুনায়েদ আহমদ বলেন, ‘আমার বিভাগে মাত্র দুজন শিক্ষক। তাই এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনাটি মানা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষার্থীরা সমস্যা নিয়ে আমার কাছে এলে, সমাধান করার ব্যবস্থা করি।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মিনহাজ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যাগটি ফলদায়ক হয়নি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগের কারণে। একজন বয়স্ক অধ্যাপকের স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ততা বেশি। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণও অনেক সময় করতে পারেন না। আর তাঁদের সঙ্গে সদ্য বয়ঃসন্ধিকাল পেরোনো শিক্ষার্থীদের চিন্তাজগতের অনেক ফারাক। মনে করি শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নিয়োগের মাপকাঠি নতুন করে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মাশরিক হাসান একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ছাত্র উপদেষ্টাদের কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা প্রয়োজন। এ সময়টা পর্যালোচনাও করা প্রয়োজন। কতজন শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসেছেন, সেটা পর্যালোচনার  জন্য একটা লকবুক থাকা প্রয়োজন। ছাত্র উপদেষ্টাদের সক্রিয় করতে নির্দিষ্ট গাইডলাইন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলা বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা শামীম আরা বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সমস্যা নিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করা হয়। সমস্যাগুলোর সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়। প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসার চেষ্টা করি।

বিভাগটির চেয়ারম্যান মিল্টন বিশ্বাস বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার এক বছরের বেশি সময়ে বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টার কাছ থেকে তিনি কোনো প্রতিবেদন পাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শওকত জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র উপদেষ্টাদের প্রতি মাসে অন্তত একবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হলো উপদেষ্টারা নিজেরাও হয়তো জানেন না তাঁদের দায়িত্ব কী। তাই দায়িত্ব দেওয়ার আগেই তাঁদের কাজ সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন ছিল।