এমইপি গ্রুপ: গ্রাহকের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতায় ৫০ বছরের পথচলা

চলতি বছরেই এমইপি গ্রুপ উদ্‌যাপন করেছে তাদের ৫০ বছরের পথচলা। গল্পটা শুরু হয়েছিল তিন ভাইয়ের হাত ধরে। তাঁরা হলেন—প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শফিউল আলম চাকলাদার ও শামসুল আলম চাকলাদার এবং বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম চাকলাদার। বর্তমানে যা তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম শকিল আলম চাকলাদার, ফারিবা ফৌজিয়া, ফাহিম আলম চাকলাদার এবং সুলতানা আলম মিথুনদের নিয়ে গঠিত বোর্ডকর্তৃক দক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

ফিরে দেখা এমইপি

উদ্যোক্তা হিসেবে ১৯৭২ সালে ঢাকার আজিমপুরে একটি ইলেকট্রিক কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সূত্রপাত হয়। বিভিন্ন প্রতিকূলতায় ১৯৭৪ সালে মোহাম্মাদী ইলেকট্রিক প্রোডাক্টস্ (এমইপি) নামে বরিশাল বিসিক শিল্প এলাকায় কারখানা স্থানান্তর করে। সেখানেই বাণিজ্যিকভাবে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে। উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। তাই এ আস্থা অর্জনের অনুপ্রেরণায়, বৃহত্তর পরিসরে শুরু করার লক্ষ্যে বিসিক থেকে সরিয়ে ১৯৯৬ সালে কারখানাটি স্বরূপআলী চেয়ারম্যান লেন, হাটখোলা, বরিশালের নিজস্ব ঠিকানায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে।

২০১০ সালে ‘মোহাম্মাদী ইলেকট্রিক ওয়্যারস অ্যান্ড মাল্টি প্রোডাক্টস্ (এমইপি) লিমিটেড’ নামে রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে এমইপি ব্র্যান্ডকে লিপিবদ্ধ করা হয়।

এমইপি গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান

দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় এক এক করে ২০১২ সালে নতুন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘এমইপি এনার্জি সেভিং ল্যাম্পস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’, ২০১৫ সালে ‘এমইপি ফ্যান লিমিটেড’, ২০১৬ সালে ‘এমইপি পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ এবং ২০১৮ সালে ‘এমইপি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ’ গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী প্রস্তুত করে যুগোপযোগী নতুন পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পণ্য ভান্ডারকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে গ্রুপটি।

সফলতার চাবিকাঠি

ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রয়োজনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সবসময় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রাধান্য দেয়। তাই সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন টেস্টিং ল্যাবে সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে উন্নত প্রযুক্তির বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী বিভিন্ন প্রকারের সুদৃশ্য ডিজাইনের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে এমইপি। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ সাশ্রয় নীতি এবং গ্রাহকের চাহিদার প্রতিও লক্ষ্য রাখে প্রতিষ্ঠানটি।

এমইপির পণ্য

এমইপি ব্রান্ডের পণ্যগুলোর মধ্যে সুইচ, সকেট, সার্কিট ব্রেকার, রেগুলেটর, এনার্জি সেভিং বাল্ব, এলইডি বাল্ব, এলইডি টিউব লাইট, প্যানেল লাইট, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, একজস্ট ফ্যান, ইলেক্ট্রিক্যাল পাইপ, কেবল কেসিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ৯৯.৯৯ শতাংশ ‘বিশুদ্ধ কপার ক্যাথোড’ থেকে নিজস্ব আপকাস্টিং লাইন কপার প্ল্যান্টে তৈরি করে ডমেস্টিক এফআর স্কিন কোটেড কেবল্, ফেক্সিবল ক্যাবল, টেলিফোন ক্যাবল, পাওয়ার ক্যাবল, এইচটি, এলটি কেবল্। যা উৎপাদন ও বাজারজাতের মাধ্যমে দেশের কেবল্ মার্কেটে চমক সৃষ্টি করছে। ‘এনার্জি সেভিং এফিশিয়েন্ট ফ্যান’ উৎপাদন করে বিএসটিআইকর্তৃক ফাইভ স্টার সনদ লাভ করেছে এমইপি।

স্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে এমইপি ব্র্যান্ডের ফ্যান ক্রেতাদের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। সেই অনুপ্রেরণায় ভবিষ্যতে আরও কিছু নতুন মডেলের ফ্যান উৎপাদনের কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজস্ব স্টক অনুযায়ী, এমইপি বর্তমানে কেবলসহ তিন হাজার এসকিউ উৎপাদন ও বিক্রি করে। বিক্রয়–প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে এমইপির সারা দেশে রয়েছে নিজস্ব বিতরণকারী চ্যানেল। বর্তমানে এমইপি তিন হাজার কর্মীর পরিবার, যেখানে ৭০ শতাংশই নারী। বরিশাল বিভাগে এই গ্রুপের মাধ্যমে বড় ধরনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

স্বীকৃতি ও অর্জন

এমইপি গ্রুপের উৎপাদিত পণ্য বিএসটিআই, বুয়েট ও সিপিআরআইকর্তৃক পরীক্ষিত সনদ লাভ করেছে। পাশাপাশি আইএসও ৯০০১: ২০১৫ সার্টিফাইড কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এছাড়া এমইপি ব্র্যান্ডের পণ্য বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এসওপিএ তালিকাভূক্ত হয়েছে। সরকারি শিক্ষা বিভাগ, পিডব্লিউডি, আরইবি, বিপিডিবি, ডক ইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড (বাংলাদেশ নেভি), পোর্ট অথরিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বনামধন্য লিমিটেড কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রি ও হাউজিংয়ে নিয়মিত ব্যবহৃত হচ্ছে। এমইপি গ্রুপ স্বকীয়তা বজায় রেখে পণ্য উৎপাদন করে বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক সামগ্রী প্রস্তুতকারী অন্যান্য সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বস্ত ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়া রাজস্ব খাতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। উৎপাদন খাতে ২০১২-২০১৩, ২০১৪-২০১৫ এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জেলাভিত্তিক সর্বোচ্চ রাজস্ব (মূসক) প্রদানকারীর স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে বিশেষ সম্মাননা সনদ লাভ করেছে এমইপি গ্রুপ।

এমইপির প্রতিশ্রুতি

গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুত ও সরবরাহে বদ্ধপরিকর এমইপি। ক্রেতাদের জীবনের নিরাপত্তায় পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এমইপি। দেশের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স খাতে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে এমইপি সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমইপি গ্রুপ মনে করে, তাদের এ সাফল্য ভোক্তা–কর্মীসহ দেশের সব মানুষের।