সহিদুরকে আত্মসমর্পণ করে জানাতে হবে, বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য

সুপ্রিমকোর্ট
ফাইল ছবি

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন সাপেক্ষে আদেশের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ।

সহিদুরের জামিনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আজ সোমবার শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকা আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আদেশের এদিন ধার্য করেন। বেঞ্চের অপর চার সদস্য হলেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মসমর্পণ করে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

ওই মামলায় গত সোমবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়ে সহিদুরকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। জামিনের পর গত বুধবার তিনি কারামুক্তি পান।

অন্যদিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।

এর আগে আপিল বিভাগ গত ২৭ আগস্ট এক আদেশে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই দ্রুত বা সম্ভাব্য ছয় মাসের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন। এই তথ্য গোপনের বিষয়টি নজরে এলে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্য হচ্ছে, আপিল বিভাগের আদেশের তথ্য গোপন করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আবেদনকারীর পক্ষের দেওয়া নোটিশে টাঙ্গাইলের পরিবর্তে ঢাকা জেলা উল্লেখসহ অসংগতি রয়েছে। শুনানি নিয়ে সেদিন হাইকোর্ট আদেশের জন্য গতকাল রোববার দিন রাখেন। ধার্য তারিখে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ গত সোমবার দেওয়া জামিনাদেশ প্রত্যাহার (রিকল) করে সহিদুরকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টাঙ্গাইলের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।

এদিকে আগের ধারাবাহিকতায় সহিদুরের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। সহিদুরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ ও আইনজীবী এম এ মুনতাকিম।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের কার্যতালিকায় টেন্ডার (জামিন আবেদনসংক্রান্ত) নম্বর উল্লেখ ছিল না। এ ছাড়া মামলাটির বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে আপিল বিভাগের আদেশের তথ্যও গোপন করা হয়েছে। একপর্যায়ে আপিল বিভাগ কার্যতালিকায় টেন্ডার নম্বর উল্লেখ না থাকা নিয়ে মন্তব্য করেন।

সহিদুরের আইনজীবী বলেন, তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এখান থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইলে গিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন বলে আশা করছেন।

আদালত বলেছেন, আত্মসমর্পণ করে আসেন। বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য রাখা হলো।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে এই হত্যায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর ও তাঁর ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ডিবি। এ মামলায় আমানুর ছাড়াও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাঁকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পাসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।