সন্তান জন্মের সময় স্ত্রী কি পাশে পাবেন আতিককে

স্ত্রী আর মেয়েদের সঙ্গে গোল্ডেন হক জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানছবি: সংগৃহীত

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিন্মি কবির গ্রুপের জাহাজ এম ভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের ভাগ্য শেষপর্যন্ত কী দাঁড়ায়, তা সময় বলবে। নাবিকদের অডিও বার্তা পরিবারগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। ১৩ বছর আগে কবির গ্রুপের আরেক জাহাজ জাহান মনি সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে ১০০ দিন পর মুক্তি পেয়েছিল।

জিম্মিদশায় থাকা এম ভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খানের দুর্ভাবনা একটু বেশিই। কারণ, ঘরে তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেখে গেছেন। ডিসেম্বরে জাহাজে যান তিনি। ছয় মাসের মধ্যে ফিরে আসার কথা ছিল। ফিরে সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকার কথা আতিকের। এর আগে প্রতিদিন কয়েকবার ফোন করে জাহাজ থেকে খবর নিতেন।

কিন্তু মঙ্গলবার জিম্মিদশায় পড়ার পর থেকে কয়েক সেকেন্ড করে দফায় দফায় স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে কথা হয় আতিকের। মাগরিবের পর মুঠোফোন জলদস্যুরা কেড়ে নেওয়ায় আর কথা হয়নি। রাত থেকে স্বামী কেমন আছেন, এমন চিন্তায় অস্থির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিনা আজমিন।

মিনা এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর বিপদের খবর পেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাতে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয় তাঁকে। মিনার মতো ১৩ বছর আগে এমন উৎকণ্ঠায় পড়েছিলেন এম ভি জাহান মনির প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিনের স্ত্রী সারজিন চৌধুরী। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর যখন জাহান মনি ছিনতাই হয়, তখন তাতে মাঈনুদ্দিনসহ ২৬ জন নাবিক ছিলেন। সারজিন ছিলেন তখন অন্তঃসত্ত্বা।

২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি মাঈনুদ্দিনের স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেছিলেন। স্বামী তখনো ছিলেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিন্মি। মা হওয়ার এমন সুখের দিনেও সেদিন স্বামীর চিন্তায় কেঁদেছিলেন সারজিন।

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি গোল্ডেন হক জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান
ছবি: সংগৃহীত

এম ভি আবদুল্লাহর নাবিক আতিক উল্লাহর স্ত্রীর ভাবনাজুড়ে এখন একদিকে স্বামী, অন্যদিকে অনাগত সন্তান। আতিকের ছোট ভাই আসিফ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর শোনার পর থেকে ভাবি কাঁদছেন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমার মা–ও কান্নাকাটি করছেন। এখন কীভাবে, কত দিনের মধ্যে ভাইয়াকে ফিরে পাব জানি না।’

আতিক উল্লাহ তিন মেয়ের জনক। মঙ্গলবার রাত ১১টায় তাঁর নন্দনকাননের বাসায় কথা হয় তাঁর মা শাহানুর বেগমের সঙ্গে। শাহানুর দুই নাতনিকে নিয়ে বসেছিলেন সোফায়। মেজ মেয়ে উনাইজা বাবার শেষ ফোনটি ধরেছিল। সে বলে, বাবা তার জন্য দোয়া করতে বলে ফোন রেখে দিয়েছেন। এরপর স্ত্রীর ফোনে এক অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ পরিবারকে জানিয়েছেন, টাকা না দিলে তারা একে একে সবাইকে মেরে ফেলবে।