দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আসলে কত

একেক মাপকাঠিতে একেক রকম তথ্য দিচ্ছে সরকারি সংস্থা। প্রকৃত ব্যবহারকারীর সংখ্যা জানা যায় না। 

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন পদ্ধতিতে হিসাব করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বিভিন্ন রকম তথ্য দিচ্ছে। ফলে কোন তথ্যটি ব্যবহারযোগ্য, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, গত জুলাই মাস শেষে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২–এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ। সংস্থাটির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩৯ শতাংশ। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একেক রকম পরিসংখ্যান না দিয়ে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাটি নিয়মিত প্রকাশ করা জরুরি।

কোনো খাতকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার মধ্যে হিসাব বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা থাকে। এ ধরনের পরিসংখ্যান দিয়ে সঠিক নীতিনির্ধারণ হয় না।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার ক্ষেত্রে বিবিএসের পরিসংখ্যানকেই ভিত্তি হিসেবে ধরা যায়। কারণ, বিটিআরসি তিন মাসে যে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন, তাঁকেই গ্রাহক ধরে। বিটিআরসির উচিত সর্বশেষ এক সপ্তাহ বা এক মাসে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করলে তাঁকে গ্রাহক হিসেবে ধরা।

সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। বিটিআরসির হিসাবে, জুলাই শেষে দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৭৫ লাখে। এ ক্ষেত্রেও সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার ব্যবহার করলেই তাঁকে ব্যবহারকারী ধরা হয়। আর একজনের কাছে একাধিক সিম থাকতে পারে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও সমস্যাটি একই। বিটিআরসির হিসাবে, জুলাই শেষে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ১ লাখে। যদিও এ হিসাবের ক্ষেত্রে সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার ব্যবহার করলেই কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য হন। এক ব্যক্তি একাধিক সিম বা মুঠোফোন ব্যবহার করলে তাঁকে একাধিক ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে জানা যায় না, দেশে আসলে কত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। 

বিবিএস গত ডিসেম্বরে আইসিটি জরিপ প্রকাশ করে। জরিপ পরিচালনা করা হয় ২০২২ সালের ২৯ মে থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত। সে জরিপে জানানো হয়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। 

বিটিআরসির জুলাইয়ের হিসাবে, গ্রাহকদের ১১ কোটি ৮৭ লাখের বেশি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখের বেশি। 

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হয় ২০২২ সালের জুনে। শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের পাঁচ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মানে হলো, দেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ। 

যদিও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়মিত পরিবর্তন হয়। ফলে ২০২২ সালের জুনে সংগ্রহ করা তথ্য এখন বদলে যেতে পারে। 

বিবিএস গত ডিসেম্বরে আইসিটি জরিপ প্রকাশ করে। জরিপ পরিচালনা করা হয় ২০২২ সালের ২৯ মে থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত। সে জরিপে জানানো হয়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। 

আরও পড়ুন

ইন্টারনেট ব্যবহারের বাধা কী কী, তা–ও উঠে আসে বিবিএসের জরিপে। বলা হয়, দেশের ৬৩ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করেন, ইন্টারনেটের কোনো প্রয়োজন নেই। ইন্টারনেট সেবাকে ৪৮ শতাংশ মানুষ ব্যয়বহুল মনে করেন। প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য যেসব উপকরণ দরকার, সেটাও ব্যয়বহুল। 

মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএর ‘মোবাইলনির্ভর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ২০২১ সালে উঠে আসে, বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারী ৪১ শতাংশের মুঠোয় আছে স্মার্টফোন। হারটি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের চেয়েও কম। 

আরও পড়ুন

শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নয়, দেশে খাদ্যশস্য, মসলা ও ফল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যান দেওয়ার নজির আছে। বাড়তি উৎপাদন ধরে সরকার কোনো পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করে। কিন্তু পরে দেখা যায়, দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি করতে হচ্ছে। ব্যাপক উৎপাদনের পরও চড়া দাম পরিসংখ্যানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি কত, সেটা বুঝতে সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। তিন মাসে একবার ব্যবহার করা ব্যক্তিকে ব্যবহারকারী ধরে হিসাব করা পরিসংখ্যানের বাস্তব ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, কোনো খাতকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার মধ্যে হিসাব বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা থাকে। এ ধরনের পরিসংখ্যান দিয়ে সঠিক নীতিনির্ধারণ হয় না।