গ্রামীণ টেলিকমের রিভিউ আবেদন খারিজে বেআইনি কিছু পাননি হাইকোর্ট

হাইকোর্টফাইল ছবি

গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের কাছে দুটি করবর্ষে আয়কর বাবদ ২১৫ কোটির বেশি টাকা দাবি করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই দাবির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় উচ্চ আদালতে মামলা (আয়কর রেফারেন্স) করতে হলে দাবি ঘিরে ২৫ শতাংশ অর্থ এনবিআরে জমা দিতে হয়। জমার এই অর্থ মওকুফ বিষয়ে ট্রাস্ট আবেদন (রিভিউ) করে, যা খারিজ করে এনবিআর।

এর বৈধতা নিয়ে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের করা রিট খারিজ করে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ১২ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৬০(১) এর (এ) ও (বি) ধারার অধীনে এনবিআর আদেশ দিয়েছে যে, কার্যক্রম প্রশাসনিক প্রকৃতির। সে অনুযায়ী এনবিআর রিভিউ আবেদনকারীকে (গ্রামীণ টেলিকম) কেবল জানিয়েছে যে, মওকুফ চেয়ে করা আবেদনটি ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর এক আদেশে খারিজ হয়েছে। এতে এই আদালত (হাইকোর্ট) বেআইনি কিছু পাননি।    

জানতে চাইলে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, রায়টি এখনো পড়া হয়নি। শনিবার পড়ে দেখবেন। রায় পড়ে মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। সম্ভবত আপিল করা হবে।  

রাষ্ট্রপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের কাছে ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ করবর্ষে আয়কর বাবদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা ২১৫ কোটির টাকার বেশি। এর বিরুদ্ধে প্রথমে কমিশনারের (আপিল) কাছে ও পরে আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করে গ্রামীণ টেলিকম। ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আয়কর রেফারেন্স মামলা করার সুযোগ রয়েছে। এই মামলা করার পূর্বশর্ত হিসেবে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৬০(১) ধারার বিধান অনুসারে আয়কর দাবি ও করদাতার স্বীকৃত দায়ের মোট পার্থক্যের ২৫ শতাংশ অর্থ এনবিআরে জমা দিতে হয়। এই অর্থ মওকুফ চেয়ে এনবিআরে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট, যা নামঞ্জুর হয়। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন (রিভিউ) করে গ্রামীণ টেলিকম। পুনর্বিবেচনার আবেদন ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর নামঞ্জুর হয়।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর এনবিআরের দেওয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে রিট করে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের কাছ থেকে দাবি করা আয়কর আদায় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১২ ফেব্রুয়ারি রুল খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান ও আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।

 পূর্ণাঙ্গ রায়টি বুধবার হাতে পেয়েছেন বলে জানান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি। তিনি আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, দুটি করবর্ষের জন্য আয়কর বাবদ গ্রামীন টেলিকমের কাছে এনবিআবরের দাবি ২১৫ কোটি টাকার বেশি। আয়কর রেফারেন্স করতে হলে আয়কর দাবি ও করদাতার স্বীকৃত দায়ের মোট পার্থক্যের ২৫ শতাংশ অর্থ এনবিআরে জমা দিতে হয়। এ হিসেবে ট্রাস্টকে রেফারেন্স দায়ের করতে হলে ৫৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এনবিআরে জমা দিতে হবে।