বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল

বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল বের করা হয়। ঢাকা, ২৪ নভেম্বরছবি: দীপু মালাকার

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলার বিচার ও বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল ও প্রতিবাদী গান হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যার পর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী পৃথকভাবে এ আয়োজন করেন।

সন্ধ্যার পর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে একটি মশালমিছিল বের করা হয়। টিএসসি চত্বর, উপাচার্যের বাসভবন, কলাভবন ও শাহবাগ ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে এসে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য হেমা চাকমা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান।

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বলেন, তারা (সরকার) প্রত্যেকটি মানুষের নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যত রকমের মবতন্ত্র হয়েছে, প্রতিটির ব্যর্থতা মূলত সরকারের।

এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘সমাজ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য আছে। আমরা জেলায় জেলায়, পাড়ায় পাড়ায় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব নিতে চাই।’

এ সময় সবার উদ্দেশে সায়ান বলেন, বাংলাদেশকে কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকারের হাতে ছেড়ে দেবেন না। সব সময় নিজেরা সজাগ থাকবেন। বাংলাদেশকে সব সময় বাংলাদেশের মানুষেরা রক্ষা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে যত আন্দোলন হয়েছে ছাত্র–জনতা করেছেন।

টিএসসির পায়রা চত্বরে আয়োজন করা হয় ‘প্রতিবাদী বাউল সন্ধ্যা’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ঢাকা, ২৪ নভেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

ডাকসুর সদস্য হেমা চাকমা বলেন, সব ধর্মের, জাতির ও সব গোষ্ঠীর কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। বাউল যেমন রাস্তায় গান গাইবে, ঠিক তেমনভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ও জাতিগোষ্ঠীর কথা বলার ও গান গাওয়ার অধিকার দিতে হবে।

এদিকে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে টিএসসির পায়রা চত্বরে ‘প্রতিবাদী বাউল সন্ধ্যা’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। সন্ধ্যার পর শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান।

সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাউলশিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামিল খ্যাপা, আকাশ গাইন, জয়ন্ত দা, কানন মোল্লা। তাঁরা বিভিন্ন বাউলগান পরিবেশনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন প্রান্ত প্রথম আলো বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাউলশিল্পীদের ওপর সংঘটিত হামলার ঘটনা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। এ ধরনের আক্রমণ কেবল একজন শিল্পীর ওপর নয়, এটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সম্প্রীতির ওপর স্পষ্ট আঘাত।’

আয়োজকদের আরেকজন স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফেরদৌস সিদ্দিক সায়মন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজে শিল্প-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ কাম্য নয়। আমরা বাংলাদেশে সব নাগরিকের সমান মর্যাদা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।’

মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আবিদুর রহমান মিশু বলেন, বাউল দর্শন কেবল একটি শিল্পধারা নয়; এটি মুক্তচিন্তা, সাম্য ও মানবতার পথ। এই পথ রক্ষায় রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গন সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে।

আরও পড়ুন