মাইক্রোফাইন্যান্স পেমেন্ট: ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধ এখন স্বাচ্ছন্দ্যময় বিকাশ–এ

বিকাশের এ ধরনের ডিজিটাল গ্রাহকবান্ধব সল্যুশন এনজিওগুলোর ক্যাশ ম্যানেজমেন্টকে সহজ করেছেছবি: বিকাশের সৌজন্যে

টাকা পাঠানো, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ বা কেনাকাটার পেমেন্টের মতো এখন এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিকাশের ব্যবহার বাড়ছে। প্রতি মাসে এনজিওর অফিসে গিয়ে টাকা জমা দেওয়ার কাজটি এখন হাতের মুঠোয় থাকা বিকাশ থেকে মুহূর্তেই করতে পারছেন গ্রাহকেরা। পাশাপাশি বিকাশের মাধ্যমে কিস্তি জমা হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এনজিও শাখাগুলোর সার্বিক অর্থ–ব্যবস্থাপনা হচ্ছে ঝুঁকিমুক্ত, তাৎক্ষণিক এবং আরও বেশি গতিশীল।

বিকাশ ও দেশের শীর্ষ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এই যৌথ সেবার ফলে ক্ষুদ্রঋণকে আরও কার্যকর ব্যবহার একদিকে যেমন সাধারণের, বিশেষ করে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে, তেমনি গ্রামীণ ও আঞ্চলিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা এনেছে। এতে কর্মসংস্থান বেড়েছে, নিশ্চিত হচ্ছে শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ।

ঢাকার বঙ্গবাজারে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করতেন চাঁদপুরের ওয়াসিম আকরাম। বঙ্গবাজারে অগ্নিদুর্ঘটনায় অন্য অনেকের মতো তাঁর দোকানও পুড়ে যায়। পুঁজি হারিয়ে চাঁদপুর ফিরে গিয়ে আবার থানকাপড় কিনে পোশাক বানানোর ছোট পরিসরে একটা কারখানা চালু করেন। ব্যবসার প্রয়োজনেই আট লাখ টাকা ঋণ নেন দিশা এনজিও থেকে। ঋণের টাকায় নতুন করে স্বপ্ন বোনা শুরু হয় ওয়াসিম আকরামের। এখন তাঁর কারখানায় কাজ করছেন ১৮ জন।

বিকাশ ব্যবহার করে ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধের সুবিধা সম্পর্কে ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘ব্যবসার কাজে আমার বিভিন্ন ধরনের ব্যস্ততা থাকে। যেহেতু সহজে বিকাশের মাধ্যমে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করা যায়, আমি যেখানেই থাকি সময়মতো বিকাশে কিস্তির টাকা জমা দিয়ে দিই। এতে আমার সময় বাঁচে, খরচও বাঁচে। পাশাপাশি আমার লেনদেনটাও নিরাপদ হচ্ছে।’

চাঁদপুরের বাজনাখোলা এলাকার গৃহিণী আকলিমা। স্বামী বাহরাইনপ্রবাসী। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন। ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে চান। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিসে (এসএসএস) নিয়মিত সঞ্চয় করছেন তিনি। প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকা জমা দেন বিকাশের মাধ্যমেই।

আকলিমা বলেন, ‘বিকাশে টাকা জমা দিলে আমাকে তাদের অফিসে যেতে হয় না। আমার ছেলে আছে, শাশুড়ি আছে, তাঁদের দেখভাল করতে হয়। তাই বাড়িতে বসে বাড়তি কোনো ঝামেলা ছাড়াই আমি বিকাশে কিস্তির টাকা জমা দিই। ফলে সংসারে আমি পুরো সময়টা দিতে পারি।’

এ রকম আরেকজন এনজিওর সুবিধাভোগী আসমা। চাঁদপুর শহরের কাঁচালাইন এলাকায় সন্তানদের নিয়ে বসবাস আসমার। স্বামী ওমানপ্রবাসী। ঘর মেরামতের প্রয়োজন হলে দিশা এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন আসমা। এখন প্রবাসী স্বামীর মাসে মাসে বিকাশে পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে প্রতি মাসের সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তি জমা দেন তিনি।

চাঁদপুরের ওয়াসিম, আকলিমা ও আসমাদের মতো সারা দেশের লাখ লাখ এনজিওর সুবিধাভোগীরা এখন বিকাশ থেকে ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধ করছেন। ব্র্যাক, টিএমএসএস, এসএসএস, পদক্ষেপ, ব্যুরো বাংলাদেশ ও শক্তি ফাউন্ডেশনের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৫৩টি এনজিওর গ্রাহকেরা বিকাশ অ্যাপ থেকেই ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন।

লেনদেন আরও নিরাপদ হলো এনজিওগুলোর

কেবল গ্রাহকের জন্য নয়, এই ডিজিটাল পরিশোধের ব্যবস্থাকে সুবিধাজনক মনে করছেন এনজিওর কর্মীরাও। বিকাশের এই ডিজিটাল গ্রাহকবান্ধব সল্যুশন এনজিওগুলোর ক্যাশ ম্যানেজমেন্টকে সহজ করেছে। সহজেই কিস্তি ও সঞ্চয়ের টাকা সংগ্রহ, ২৪/৭ লেনদেনের রিপোর্টিং, ক্যাশ বহন করার ঝুঁকি এড়ানো, কর্মঘণ্টা সাশ্রয় ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিক ক্ষুদ্রঋণ খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা এনেছে।

সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিসের (এসএসএস) চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের রামপুর শাখার ম্যানেজার সোহানুর রহমান বলেন, ‘বিকাশ লেনদেনে ক্যাশ টাকার কোনো বিষয় নেই। সদস্যরা বিকাশে টাকা জমা দেন, তা আবার সরাসরি ব্যাংকে চলে যায়। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি একেবারে শূন্য। হাতে হাতে টাকা জমা নেওয়ায় চুরির ভয় থাকে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই ঝুঁকি নেই। ফলে আমাদের সদস্যরাও নিরাপদে তাঁদের টাকা জমা দিতে পারেন আবার আমাদের অফিস কর্তৃপক্ষও নিরাপদ থাকে।’

একই মত ব্যক্ত করে আরেকটি এনজিও ‘পদক্ষেপ’–এর কুমিল্লা জোনাল ম্যানেজার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যেসব সদস্য অ্যাপ থেকে কিস্তির টাকা জমা দেন, তাঁরা খুব সহজেই দিতে পারেন। একবার দিলে পরবর্তী সময় আর কোনো বাড়তি কষ্ট করতে হয় না। যেসব সদস্য বিকাশে জমা দেন, তাঁদের ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করাও সহজ। তাঁরা জমা দেওয়ার সময় একটা ডকুমেন্ট, আবার আমরা যখন সফটওয়্যারে ইনপুট দিই, তখন তিনি আরেকটা নোটিফিকেশন পান। অর্থাৎ গ্রাহক টাকা জমা দেওয়ার দুটি ডকুমেন্ট পান।’

‘দিশা’র রিজিওনাল ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আগে অনেক সদস্য নিতে পারতাম না। তাঁরা জিজ্ঞাসা করতেন, ডিজিটাল লেনদেন করা যায় কি না। এখন সদস্যরা আমাদের কাছ থেকে কিস্তি নিয়ে যেকোনো জায়গা থেকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছেন। এতে সদস্যের যেমন সুবিধা হচ্ছে, তেমনি আমাদেরও সুবিধা।’

বিকাশ–এ কিস্তির টাকা দেওয়ার পদ্ধতি

গ্রাহকেরা বিকাশ অ্যাপের ‘মাইক্রোফাইন্যান্স’ আইকনে ট্যাপ করে অথবা ইউএসএসডি কোড *২৪৭# ডায়াল করে খুব সহজে কয়েকটি ধাপে ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও সঞ্চয়ের টাকা জমা দিতে পারছেন। প্রথমে অ্যাপ স্ক্রিনে মাইক্রোফাইন্যান্স অপশনে ক্লিক করে তালিকা থেকে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি বেছে নিয়ে ক্লিক করতে হবে। এরপর গ্রাহকের শাখার তথ্য, সদস্য নম্বর বা আইডি দিতে হবে। পরবর্তী ধাপে কিস্তি ও সঞ্চয়ের বিস্তারিত দেখে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে বিকাশের পিন দিয়ে মাইক্রোফাইন্যান্স পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। পেমেন্ট সম্পন্ন হয়ে গেলে অ্যাপ থেকেই ডিজিটাল রসিদ ডাউনলোড করেও রাখতে পারবেন গ্রাহকেরা।