টাইগারপাসে র‍্যাম্প নির্মাণ না করতে সিডিএর প্রতি আহ্বান

সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যরাপ্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসের দ্বিতল সড়কে র‍্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সিডিএকে সরে আসার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন। প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও প্রশান্তির জায়গা হওয়ায় এখানে র‍্যাম্প না করার দাবি জানায় এ সংগঠন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন। চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস মোড় থেকে সিআরবিমুখী দ্বিতল সড়কে র‍্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণার জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের মুখপাত্র রিতু পারভী। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মাহফুজুর রহমান, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইমরান বিন ইউনুস ও অধ্যাপক শফিক হায়দার। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নগরের এই সড়কের আশপাশে দুটি উড়ালসড়ক ও র‍্যাম্প রয়েছে। তাই এখানে কোনো র‍্যাম্পের প্রয়োজন নেই।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অন্যান্য র‍্যাম্প এবং শহরময় আরও অসংখ্য র‍্যাম্প নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু আমরা আমাদের ঐতিহ্য এবং প্রশান্তির এই জায়গায় র‍্যাম্প না করার দাবি জানাচ্ছি। প্রাকৃতিক ঐতিহ্য চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের একমাত্র দ্বিতল সড়কটিকে রক্ষা করতে সিডিএর টাইগারপাস থেকে সিআরবি অভিমুখে র‍্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি রাখছে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন।’

র‍্যাম্প নির্মাণে সিডিএর উদ্যোগে বিস্ময় প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘এই সিআরবিতেই অবস্থিত ঐতিহ্য ঘোষিত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক দ্বিতল সড়ক। এই সড়কের ওপর সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের প্রস্তুতি নিতে ছোট-বড় গাছে দাগ দেয় কাটার জন্য। যার মধ্যে ছিল শতবর্ষী গাছ। এই সংস্থা কেমন করে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়। দ্বিতল এই সড়ক অভিমুখে কোনো র‍্যাম্পের দরকার নেই বলে জানিয়েছেন স্বনামধন্য স্থপতি ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা। আমরা সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং গ্রহণযোগ্য সেই সব বিশেষজ্ঞ স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদের সঙ্গে একমত হয়ে দাবি তুলছি, সিডিএ এই দ্বিতল সড়ক অভিমুখে র‍্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে।’

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাস। দুটি র‍্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠার র‍্যাম্প নির্মাণের কথা ছিল। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করতে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিডিএ। এ জন্য বন বিভাগের অনুমোদনও নেয় তারা।

র‍্যাম্প নির্মাণের জন্য ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল সড়কের ছোট-বড় ৪৬টি গাছ কাটা হবে—গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে নগরবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ১ এপ্রিল পরিবেশকর্মীদের আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে ২ এপ্রিল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সিডিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই দিন নকশা সংশোধনের আশ্বাস দেন সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ। তবে আন্দোলনকারীরা তখন র‍্যাম্প নির্মাণ না করার দাবি জানান।

নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে আলোচিত ও ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল সড়কের ওপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আগের নকশা সংশোধন করে এখন মূল সড়কের বাইরে রেলওয়ের জায়গায় এই র‍্যাম্প নামানোর জন্য নতুন নকশা করেছে সংস্থাটি। এতেও বেশ কিছু গাছ কাটা পড়বে। তবে এই নকশা অনুযায়ী র‍্যাম্প নির্মাণ করা হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।