গুলির পর পঙ্গু ছাত্রদল নেতা, ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
এক বছর আগে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নালিশি মামলা হয়েছে। একই মামলায় আসামি করা হয় পুলিশের এক সোর্সকেও (তথ্যদাতা)। আজ রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি করেন সাইফুলের মা ছেনোয়ারা বেগম।
মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বর্তমানে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত মো. কামরুজ্জামান, বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অসীম দাশ ও নুরনবী, সাবেক এসআই সাইফুল ইসলাম, কে এম নাজিবুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রবিউল হোসেন ও পুলিশের সোর্স মো. শাহজাহান ওরফে আকাশ।
আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার নিচে নয়, এমন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে বিষয়টির সত্যতা আছে কি না, তা তদন্তের জন্য নগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী কাজী মফিজুর রহমান।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৬ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর বাসা থেকে পতেঙ্গায় নিজের মালিকানাধীন রেস্তোরাঁয় যাওয়ার জন্য বের হন তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম। ওই সময় পুলিশের সোর্স শাহজাহান তাঁর ছেলের মুঠোফোনে কল দিয়ে জরুরি কাজের জন্য নগরের অক্সিজেন মোড়ে যেতে বলেন। পরে সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে একটি প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যান। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা সবাই সাদাপোশাকে ছিলেন। ওই কারে করে তাঁর ছেলেকে পুরো শহর ঘোরানো হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, দুই থেকে তিন ঘণ্টা গাড়িতে ঘোরানোর পর বায়েজিদ-সীতাকুণ্ড সংযোগ সড়কে নিয়ে যাওয়া হয় সাইফুলকে। তখন আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টা। নির্জন ওই সড়কে সাইফুলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। তা না দিলে গুলি করে দেওয়ার হুমকি দেন। কিন্তু সাইফুল এত টাকা কোত্থেকে দেবেন জানালে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পুলিশ সদস্যরা। পরে বাঁ ও ডান পায়ের হাঁটুর ওপর দুটি গুলি করা হয় সাইফুলকে। পরদিন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাইফুল নিজেকে দেখতে পান।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, পুলিশ গুলি করার কারণে আহত সাইফুলকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়।
মামলার বাদী ছেনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে বাধা হয়ে দাঁড়ান সাইফুল। এ জন্য পুলিশকে দিয়ে তাঁর ছেলেকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দল করায় তাঁর ছেলেকে গুলি করার জবাবদিহি করতে হবে না পুলিশকে। জড়িত পুলিশসহ সবার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হোক।
জানতে চাইলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার সাবেক ওসি মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুলকে পুলিশের কেউ গুলি করেননি। অস্ত্র উদ্ধারের জন্য তাঁকে সংযোগ সড়কের পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। সেই গুলিতে তিনি আহত হন। পরে তাঁর সহযোগীদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করে। এ ছাড়া সাইফুল পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকের ২১টি মামলা রয়েছে।