আবারও আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার পেল বাংলাদেশের দুই প্রকল্প

চলতি বছরের আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের দুটি প্রকল্পসহ ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লেবানন ও সেনেগালের চারটি প্রকল্প বিশ্বব্যাপী স্থাপত্যের অন্যতম বৃহৎ পুরস্কার পেয়েছে।

বাংলাদেশের খন্দকার হাসিবুল কবির ও সুহেলি ফারজানার ঝিনাইদহের আরবান রিভার স্পেসেস প্রকল্প এবং রিজভি হাসান, খাজা ফাতমি ও সাদ বেন মোস্তফার রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্স প্রোগ্রামের কমিউনিটি স্পেসের নকশা পুরস্কার পেয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের (একেডিএন) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার বা একেএএ আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের একটি অংশ।

একেডিএনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের দুটি এবং ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লেবানন ও সেনেগালের একটি করে মোট ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের ১০ লাখ ডলার ভাগ করে দেওয়া হবে।

নারী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ ঝিনাইদহের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণে নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকা পরিষ্কার করে নদীতে অভিগম্যতা বাড়ানোর আরবান রিভার স্পেসেস প্রকল্পটি আপাতদৃষ্টে সহজ ছিল। কিন্তু এর মাধ্যমেই স্থানীয় নির্মাণকৌশল ও সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে সুবিবেচনাপূর্ণ ও সাদামাটা প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়, যা স্থানীয় লোকজনের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। নদীর তীরবর্তী পরিত্যক্ত ময়লার ভাগাড়কে একটি আকর্ষণীয় বহুমুখী স্থানে পরিণত করা হয়েছে, যা এরই মধ্যে ঝিনাইদহের মানুষের কাছে ব্যাপক সমাদৃত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যতম নদীবহুল দেশের একটি নদী ও এর তীরবর্তী অঞ্চলে পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় যেমন রোধ করা গেছে, তেমনি নদীর স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থানেরও উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিভিন্ন জরুরি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দক্ষতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্স প্রোগ্রামের ছয়টি অস্থায়ী কমিউনিটি স্পেস। বাংলাদেশের কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশ্রয় নেওয়া বিপুল পরিমাণ বাস্তুহারা রোহিঙ্গার প্রয়োজন তো বটেই, বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিশ্চিত করা হচ্ছে। যথাযথ কর্মপরিকল্পনা, জোরালো অংশীদারত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্পেসগুলোর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নকশা শরণার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ ও স্থানের চাহিদার নিরিখে করা হয়েছে।

এর আগেও বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকল্প এই কাঙ্ক্ষিত আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার জিতেছে। ২০১৯ সালে দক্ষিণ কানারচরে আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রকল্প (স্থপতি সাইফ উল হকের নকশা) এ পুরস্কার জেতে এবং একই বছর স্থপতি জুবায়ের হাসানের করা গাজীপুরে অ্যাম্বার লুম ডেনিম শেডের নকশাটি শর্ট লিস্টে ছিল। ২০১৬ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে ছিল স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের নকশা করা ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ এবং কাশেফ চৌধুরীর করা গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। ১৯৮৯ সালে এ পুরস্কার জিতেছিল গ্রামীণ ব্যাংক হাউজিং প্রোগ্রাম এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং আর ২০০৭ সালে জিতেছিল রুদ্রপুরের একটি স্কুল। এই পাঁচটি ছাড়াও ২০১০ সালে আগা খান পুরস্কারের শর্ট লিস্টে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশের আরও ২টি প্রকল্প।

১৯৭৭ সালে মহামান্য আগা খান এই স্থাপত্য পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এ পুরস্কারের মাধ্যমে এমন নির্মাণশৈলী চিহ্নিত করে উৎসাহ দেওয়া হয়, যাতে মুসলিম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এ পুরস্কারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি স্থাপনা মানুষের আর্থসামাজিক চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক জীবনে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে, তা-ও গুরুত্বসহকারে দেখা হয়।

২০২২ সালে ওমানের রাজধানী মাসকাটে আগা খান সংগীত পুরস্কারের সঙ্গে একযোগে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ২০টি প্রকল্প মনোনয়নের জন্য গঠিত ৯ সদস্যের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বিচারক দলে ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড সেটেলমেন্টসের মহাপরিচালক কাজী খালিদ আশরাফ। একেএএ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আগা খান। এ ছাড়া স্টিয়ারিং কমিটিতে রয়েছেন ঢাকায় অবস্থিত মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টসের অধ্যক্ষ মেরিনা তাবাসসুম। পুরস্কার পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ফররুখ দেরাখশানি।