১৯৯৮ সালে ১২ জন সদস্যকে নিয়ে ডিকাবের যাত্রা শুরু হয়েছিল। রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপস্থিত তিন সদস্যকে সম্মাননা জানানো হয়। পরের পর্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

প্রযুক্তির কারণে যে কেউ চাইলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। আর এ কারণে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা খুব জরুরি। সাংবাদিকদের পড়াশোনা করতে হবে। শুনে-বুঝে লিখতে হবে; যাতে করে মানুষের কাছে সেই গ্রহণযোগ্যতা থাকে।
এম হুমায়ুন কবীর, সাবেক রাষ্ট্রদূত

অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি ডিকাব সদস্যদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে আমাদের প্রশ্ন করে থাকেন, যা আমাদের সাহায্য করে। যদি কোনো কিছু ভুল হয়ে থাকে, সেটি তাঁরা তুলে ধরেন এবং আমরা এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের শুধরে নিই।’

আব্দুল মোমেন আরও বলেন, গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ভূমিকা পালন করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বছরের ৩৬৫ দিন আপনাদের কাজের বিভিন্ন ইস্যু থাকবে। এর মধ্যে কিছু উচ্চপর্যায়ের সংবেদনশীল ইস্যু থাকবে, যেগুলো জানার পরও তা প্রকাশ করবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তটা আপনাদেরই নিতে হবে।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কূটনীতিতে ব্যক্তিস্বার্থ বলে কিছুই নেই। বাংলাদেশ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সেই জায়গায় বাংলাদেশ তার অবস্থানকে ঠিক রেখে আমাদের যে মূলনীতি “সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”—এটা ঠিক রেখে কাজ করে যাবে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশে বিশ্লেষণধর্মী ও গবেষণামূলক লেখার অভাব আছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগিতাকে আমরা সমন্বিত অংশীদারত্বে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অনেক বন্ধুদেশের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা করতে চাইছি। এখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের প্রতি বিভিন্ন দেশের বন্ধুত্বের পরিবর্তনটাও দৃশ্যমান হচ্ছে।’

কূটনীতিতে অনেক সংবেদনশীল ইস্যু থাকে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সেসব বিষয় কূটনীতিকদের দেখতে হয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থটা দেখতে হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার। গণমাধ্যমকেও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রাখতে হবে।

একজন সাংবাদিক চাইলেও এখন আর সাধারণ মানুষকে হালকা করে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রযুক্তির কারণে যে কেউ চাইলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। আর তাই গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা খুব জরুরি। সাংবাদিকদের পড়াশোনা করতে হবে। শুনে–বুঝে লিখতে হবে, যাতে করে মানুষের কাছে সেই গ্রহণযোগ্যতা থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ এখন আর দারিদ্র্যপীড়িত দেশ নেই। এখনকার সম্ভাবনার কথা মিডিয়াতে আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে।

ভোরের কাগজের সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। প্রতিনিয়ত বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের বদলে নিতে হবে। তিনি বলেন, আজকের দিনে গণমাধ্যমের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নতুন এই বাস্তবতার সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়, তা এখন এক বড় ইস্যু।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন ডিকাবের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।

প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের কূটনৈতিক প্রতিনিধি মীর মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব উপস্থাপন করেন চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি পান্থ রহমান।