চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির দাবিতে প্রধান ফটকে তালা

প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রাম, ১৭ আগস্টছবি: প্রথম আলো

নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে আবারও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক অবরোধ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা–কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে অবরোধ শুরু হয়। এতে অংশ নেওয়া নেতা–কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও বিজয়ের কর্মী হিসেবে পরিচিত। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধের কারণে সে সময় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম বাহন শাটল ট্রেন ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস চলাচল বন্ধ থাকে। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। কমিটির দাবিতে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অবরোধের ঘটনা ঘটল।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, আগামীকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা। এ সভায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ঢাকা রওনা হয়েছেন। এটাকে ঘিরেই নতুন করে কমিটি নিয়ে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে।

আজ বিকেল থেকে ছাত্রলীগের ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও বিজয় উপপক্ষের নেতা–কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এসে জড়ো হন। এরপর সেখান থেকে গোল চত্বরের মূল ফটকে আসেন। এরপর ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

বিকেল সাড়ে চারটায় সরেজমিনে মূল ফটকে গিয়ে দেখা যায়, ফটকের বাইরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাস আটকে রয়েছে। বন্ধ রয়েছে রিকশা, সিএনজিসহ অন্য যান চলাচলও। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা জড়ো হয়ে ‘অবৈধ কমিটি, মানি না মানব না’; ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, মানি না মানব না’; ‘নতুন কমিটি নতুন কমিটি; দিতেই হবে দিতেই হবে’ স্লোগান দিচ্ছেন।  

জানতে চাইলে ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, শোকের মাসে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আনন্দমিছিল করেছে। এ নিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ ছাড়া সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতেও দুই নেতার কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। এক বছর মেয়াদের কমিটি ইতিমধ্যে চার বছর পার করেছে। এ কারণে নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমেছে।

বিক্ষোভকারীরা সড়কে কাঠ বিছিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। চট্টগ্রাম, ১৭ আগস্ট
ছবি: প্রথম আলো

বিজয় উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, এক বছরের কমিটি চার বছর পার করেছে। সভাপতি রেজাউল হক বারবার বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়েছেন। কমিটি বাতিল করতে হবে। নতুন কমিটি ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি নিয়ে অসন্তোষ থাকলে সেটা কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর জানানো যেতে পারে। অবরোধ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলা ছাত্রলীগের নীতি হতে পারে না। নেতা–কর্মীদের এসব থেকে সরে আসা উচিত।

সভাপতি রেজাউল হকও একই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, শোকের মাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদল যেন ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে নেতা–কর্মীদের মনোযোগ দিতে হবে।

ফটকে তালা দেওয়া প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির দাবিতে ওরা (ছাত্রলীগ) তালা দিয়েছে। এটা প্রশাসনের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নয়। তালা খুলে দেওয়ার জন্য তাঁদের বলা হয়েছে।  

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এ কমিটির মেয়াদ ছিল এক বছর। কিন্তু তিন বছর পরে সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে বহাল রেখে গত বছরের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ৪টি হলের প্রায় ৩০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন। ওই দিন রাতেই মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধের ডাক দেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। অবরোধ অব্যাহত থাকে ২ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এ কারণে সে সময় ৯ বিভাগের ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আবার ১৯ সেপ্টেম্বর ভোরে একই দাবিতে অবরোধ করে ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ। এক দিন চলা এ অবরোধেও স্থগিত হয়েছিল ৯ বিভাগের ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ও আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে মহিবুল হাসানের দুটি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের নয়টি উপপক্ষ রয়েছে। অবরোধ করা বিজয় মহিবুল হাসানের ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।