চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি সুভাষ বড়ুয়া
ছবি: প্রথম আলো

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রমের বিরোধিতা করেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।

চট্টগ্রাম ফোরাম বলছে, নগর ও বন্দরের সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধু মেট্রোরেল নির্মাণ করে যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়। তাই ব্যয়বহুল মেট্রোরেল ব্যবস্থায় যাওয়ার আগে বিকল্প সাশ্রয়ী পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন ফোরামের নেতারা।

আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরাম এ অনুরোধ জানায়। ‘বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ভৌত অবকাঠামো কোন পথে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সহসভাপতি ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরে মেট্রোরেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ৭০ কোটি টাকা খরচ হবে। আর সময় লাগবে দুই থেকে তিন বছর। মেট্রোরেলের মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল গণপরিবহন অবকাঠামো নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই এমন সময়ে করা হচ্ছে, যখন বাংলাদেশসহ বিশ্ব মহামন্দায় পতিত। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন কমছে। রাজধানী ঢাকার জন্য যা প্রযোজ্য, চট্টগ্রামে তা প্রযোজ্য না–ও হতে পারে।

সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘১৯৯৫ সালে প্রণীত চট্টগ্রামের মহাপরিকল্পনার সুপারিশ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ইচ্ছেমতো বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে। এ উন্নয়নপ্রক্রিয়া এখনো চলছে। এ প্রক্রিয়ায় ছিল তাড়াহুড়া আর ঝড়ের গতি, কোনো চিন্তা বা দূরদর্শিতা ছিল না। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিজ্ঞানসম্মত ট্রাফিক তথ্যের বিশ্লেষণও ছিল না।’

এই বিচ্ছিন্ন অপরিকল্পিত উন্নয়নপ্রক্রিয়ার সুফল জনগণ পাচ্ছে না উল্লেখ করে এই পরিবহনবিশেষজ্ঞ বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হচ্ছে, কিন্তু যানজট কমছে না, জলাবদ্ধতা কমছে না, বায়ুদূষণ কমছে না। জনগণের টাকার অপচয়ের কোনো জবাবদিহি নেই।

মেট্রোরেলে যাওয়ার আগে বিকল্প সাশ্রয়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করে ফোরামের নেতারা বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, যানবাহন ব্যবস্থাপনা, গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেন করা, ফুটপাত ব্যবস্থাপনা, মোড়ের নকশা সংস্কার, বিদ্যমান সড়কের শতভাগ ব্যবহার ও ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ব্যয়বহুল প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলার কারণে তাঁদের উন্নয়নবিরোধী আখ্যা দেওয়া হয়। তাঁদের সব মতামত নাকচ করে দেওয়া হয়। সংস্থাগুলো সব সময় ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী। এটির নিশ্চয় কারণ আছে। এর মূল কারণ রাজনৈতিক। মেট্রোরেলের মতো বড় অবকাঠামো নির্মাণ মানুষকে মুগ্ধ করার জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের উপদেষ্টা শফিক হায়দার চৌধুরী, নির্বাহী সহসভাপতি এ বি এম বাসেত, সহসভাপতি আহমেদ জিন্নুর ও বিধান বড়ুয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসনিমা মুনা, সদস্য নাজিম উদ্দিন ও তানভীর পিয়াল।

গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম শহরে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। মেট্রোরেল চালু করার আগে প্রাথমিক সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় সরকার।

‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্রাকশন ফর চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া’ শীর্ষক এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি শুরুর সময় ধরা হয়েছে গত বছরের অক্টোবর, যা শেষ হবে ২০২৫ সালের মার্চে। ৭০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে কোরিয়ার সাহায্য সংস্থা কইকা দেবে ৫৭ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন