‘ইনফ্লুয়েন্সিং’ কি হতে পারে মূলধারার পেশা

‘কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার...’ গানের এমন কথার মতো একসময় প্রায় সবাই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতেন। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে এই চাওয়ার বিষয়েও এসেছে পরিবর্তন। চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা আইনজীবী—প্রচলিত পেশার প্রথা ভেঙে তরুণেরা এখন ভিন্নরকম পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। বেছে নিচ্ছেন নিজের পছন্দ ও শখের পেশা।

বর্তমানে তেমনই একটি পেশা হলো ‘ইনফ্লুয়েন্সিং’। এই কাজে নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি করে খুব সহজেই আয় করা যায়। যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষা, তথ্য, বিনোদন, বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যামূলক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানান যাঁরা, তাঁদেরই বলা হচ্ছে ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ বা ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’। উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয় ও আলোচিত। তাই অনেক তরুণ এখন ঝুঁকছে এই পেশার দিকে।

গত কয়েক বছরে ডিজিটাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনফ্লুয়েন্সার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ‘কনটেন্ট’ শব্দটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে গড়ে একজন মানুষ প্রতিদিন অনলাইনে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। এই সুযোগটাই সব ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটররা কাজে লাগাচ্ছেন। নিজেদের তৈরি সৃজনশীল অডিও বা ভিডিওর মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁরা।

বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের প্রসার মূলত করোনা মহামারির সময় থেকেই শুরু হয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে সে সময়টায় ঘরবন্দী মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিলেন। ফলে দ্রুত বাড়তে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার। সেই সুবাদে ব্র্যান্ডগুলোও নিজেদের পণ্যের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নেয়।

এই প্রক্রিয়ায় ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টিকটকের মতো মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রচারণা চালায়। আর এ কাজে গ্রাহকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে পৌঁছানোর জন্য বেছে নেন জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারদের। যাঁর মূল উদ্দেশ্য থাকে পণ্যের প্রচার ও বিক্রি বাড়ানো।

ইনফ্লুয়েন্সাররা বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। যেমন বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, পণ্যদ্রব্য বিক্রয়, অনলাইন কোর্স, সাবস্ক্রিপশন ইত্যাদি।

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের কাছে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বর্তমানে আয়ের অন্যতম বড় একটি উৎস। তাঁরা নিজের পরিচিতিকে আয়ের উৎস বানিয়েছেন পণ্য প্রচারে অংশ নিয়ে। এ ধরনের মার্কেটিংয়ে বা বিপণনের মাধ্যমে মাসে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকারও বেশি উপার্জন করেন ইনফ্লুয়েন্সাররা।

‘ইনফ্লুয়েন্সার’ হতে চাইলে নিজেকে কতটা প্রস্তুত রাখতে হবে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের নতুন সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাকজেনটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদিল হোসেন নোবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনকার তরুণেরা এ পেশায় নিজেদের খুব মানিয়ে নিয়েছেন।

সৃষ্টিশীল তরুণেরা এ পেশায় নিজেদের আরও সংযুক্ত করলে ব্যবসা কিংবা সামাজিক প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পারব আমরা। ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে এ ধরনের বিপণন-পন্থার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আমার কাছে তথ্যপ্রযুক্তির এ সময়ে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংকে বেশ কার্যকর বলেই মনে হচ্ছে।’
তবে অনেকেই দক্ষতা অর্জন না করে অর্থাৎ কনটেন্ট তৈরির আদ্যোপান্ত না জেনেই এই পেশা শুরু করেন। ফলে সাফল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে ঝরে পড়েন। এখন ইউটিউবসহ কয়েকটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা শেখা যায়, নিজেকে সৃষ্টিশীল পেশায় দেখতে চাইলে সেগুলো খুঁজে শিখতে হবে। বুঝতে হবে।

যেকোনো কাজই পরিকল্পনার মাধ্যমে গভীরভাবে শেখার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষাবিদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিশীল তরুণদের যেহেতু এই পেশায় এত আগ্রহ, তাই শুধু অন্যকে দেখে আমিও তাঁর মতো হব—এমনটা ভাবা উচিত নয়। বরং জেনে-বুঝে, দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন করেই কাজে নামা দরকার। শুধু ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্যই নয়, সব পেশার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য বলে আমি মনে করি। শেখার কোনো বিকল্প নেই—কথাটা সব সময় মনে রাখলে কেউ বিফল হবে না।’