বাংলাদেশ সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ সংশ্লিষ্টদের

সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম
ছবি: প্রথম আলো

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুই পক্ষের সংঘাতের রেশ যাতে কোনোভাবে বাংলাদেশে না আসে, সে ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাড়তি জনবল নিয়োগ করতে হলে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর খুরশেদ আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানান।

রাখাইন রাজ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দুই মাস ধরে তুমুল লড়াই চলছে। দুই পক্ষের লড়াইয়ের জেরে গত শুক্রবার মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া মর্টারের গোলায় এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত ও কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আজ আমরা বাংলাদেশের সব সংস্থাকে নিয়ে একটি সভা করেছি। আলোচনায় এটা উঠে এসেছে যে সেখানে যা ঘটছে, সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে আমরা বলেছি, এর রেশ যাতে আমাদের ওপর না আসে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সীমান্তে সজাগ থাকতে বলেছি। বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হলে তারা সেটা মোতায়েন করবে। এরপরও সাগর দিয়ে বা অন্য পথে নতুন করে রোহিঙ্গারা যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছি।’

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব আরও জানান, আগেরবার মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আসার সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু লোকজনের যোগসাজশ ছিল। এবার যাতে সেটা না হয়, সে জন্য সব সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

রাষ্ট্রদূতকে তলব

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে (বাঁয়ে)
ছবি: প্রথম আলো

আজ সকালে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অণুবিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. নাজমুল হুদার দপ্তরে তলব করা হয়। এ নিয়ে সীমান্তে অনাহূত পরিস্থিতির কারণে মিয়ানমারের দূতকে এক মাসের মধ্যে চারবার তলব করা হলো।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেসবের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য আজ আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদলিপি দিয়েছি। আমরা এটাও বলেছি যে এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কীভাবে বিষয়টির সুরাহা করা হবে, সেটি মিয়ানমারকে চিন্তা করতে হবে। কিন্তু মিয়ানমারের গোলা যেন বাংলাদেশের ভূখণ্ডে না আসে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়, দায়িত্বটা মিয়ানমারের। বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও শান্তিকামী রাষ্ট্র। আমরা অনেক দিন ধরে অনেক ধৈর্য ধরেই সহ্য করে যাচ্ছি। তাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের সমস্যার সমাধান করুন। যাতে করে আমাদের এখানে কোনো রক্তারক্তি ও প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে।’

এর আগেও তো তিনবার মিয়ানমারের দূতকে তলব করা হয়েছিল। এতে কি ফল হচ্ছে—জানতে চাইলে খুরশেদ আলম বলেন, ‘এটাতে আসলেই আমাদের করার কিছু নেই। প্রতিবেশীকে নিয়মমাফিক যা করার, সেটাই করছি। মিয়ানমারের কাছে আমাদের কথাবার্তা ও যে বক্তব্য দিয়েছি, সেখানে কোনো রকম দুর্বলতা বা নতজানুতা নেই। বরং আমরা শক্ত অবস্থানে থেকেই নিজেদের কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করছি ঢাকায় আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করতে। যাতে করে তাদের বলতে পারি যে বারবার একই অবস্থা শুনে গিয়ে মিয়ানমারের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াটা প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমরা চাই না এসবের পুনরাবৃত্তি ঘটুক।’

তলবের জবাবে মিয়ানমারের দূত কী বলেছেন—এমন এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত সব বিষয় শুনেছেন। কোনো বিষয়ে না করেননি। স্পষ্টভাবে কোনো জবাব নেই। এ তথ্য নেপিডোতে জানাবেন, যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে।’

অতীতের তলবের পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কী জবাব এসেছিল—জানতে চাইলে খুরশেদ আলম বলেন, ‘গুলির গায়ে মিয়ানমার আর্মি লেখা থাকলেও মিয়ানমার বলছে গুলি করেছে আরাকান আর্মি। তারা সেনাবাহিনীর গুলি চুরি করে নিয়ে গেছে। আরাকান আর্মি এটা করছে, যাতে করে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়, এমনটাই বলেছে মিয়ানমার। আমাদের কথা হচ্ছে দেখেন, আপনাদের অভ্যন্তর থেকে যা কিছুই আসুক না কেন, সেটা আপনাদের দায়িত্ব, আপনারা দেখবেন। যা কিছু করার দরকার, সেটাই করুন।’

আরও পড়ুন

দফায় দফায় তলবের পরও সীমান্ত পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না—এমন এক প্রশ্নে ক্ষোভ জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কি হচ্ছে? গত পাঁচ বছর ধরে জাতিসংঘ থেকে এমন কোনো বড় দেশ নেই, এমন কোনো জায়গা নেই যাদের কাছে যাইনি, ধরনা দিইনি, কথা বলিনি। সমস্যার সমাধান তো হয়নি। ইউএনএইচসিআর কি পেরেছে? কাজেই দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের সমাধানে সময় লাগবে, ধৈর্য ধরতে হবে। তবে আমরা যদি শক্ত থাকি, নিজেরা নিজেদের মধ্যে সমাধান আনবে।’