ঘূর্ণিঝড় মোখা: কর্ণফুলী টানেল রক্ষায় ‘ফ্লাড গেট’ বন্ধসহ নানা প্রস্তুতি

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম যোগাযোগ পথ টানেলকে রক্ষায় বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে টানেলের দুই প্রান্তে থাকা ‘ফ্লাড গেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের পানি যাতে টানেলের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্যই এসব গেট বন্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। টানেলের নগর প্রান্ত পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পাশে, অন্য প্রান্তের অবস্থান আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে।  

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে গত বুধবার জরুরি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কর্ণফুলী টানেলের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয় সেতু কর্তৃপক্ষকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সেতু কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড়ের সময় টানেলের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কয়েকটি বিশেষ নির্দেশনা দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত কর্তৃপক্ষকে।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রয়োজনে দুই প্রান্তে থাকা ফ্লাড গেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে পারস্পরিক সমন্বয় করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে জেনারেটর প্রস্তুত রাখা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় নজরদারি দল (সার্ভিলেন্স টিম) প্রস্তুত রাখা, প্রকল্পে কর্মরত সবার এবং সম্পদ (জানমাল) রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত যানবাহনসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী (ক্রেন, এক্সকাভেটর, ডিভাইডার, পাইপ, টিন ইত্যাদি) নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘূর্ণিঝড়ে উদ্ভূত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রাপ্ত নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখাকে ঘিরে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

দেশের প্রথম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার টানেলের মোট দৈর্ঘ্য হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলে থাকছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব, যেগুলোর প্রতিটি দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক আছে। আনোয়ারা প্রান্তে আছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক। টানেলটি নির্মাণের বর্তমান ব্যয় ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা।