স্লোভেনিয়া: ব্যালট বিপ্লবে স্বাধীনতার রায়

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

স্লোভেনিয়া এখন স্বাধীন, এই শিরোনাম ছিল ১৯৯১ সালের জুনে প্রকাশিত সংবাদপত্রেফাইল ছবি: এএফপি

ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। আর এ বিজয় কখনো আসে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে, আবার কখনো আসে ব্যালটের নীরব বিপ্লবে। ২৬ ডিসেম্বর, মধ্য ইউরোপের আল্পস পর্বতঘেরা সুন্দর দেশ স্লোভেনিয়ার ‘স্বাধীনতা ও ঐক্য দিবস’। ১৯৯০ সালের এই দিনেই সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল যে স্লোভেনিয়ার মানুষ যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়।

স্লোভেনিয়ার জাতীয় পতাকা

ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৯০ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্লোভেনিয়ার মানুষ এক ঐতিহাসিক গণভোটে অংশ নিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল একটাই, ‘স্লোভেনিয়া কি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে?’ তিন দিন পর ২৬ ডিসেম্বর লুবলিয়ানার পার্লামেন্টে সেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোটার স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছে। যুগোস্লাভিয়ার সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন থেকে বেরিয়ে আসার এ সম্মিলিত সিদ্ধান্তই ছিল স্লোভেনিয়ার বিজয়ের প্রথম ও প্রধান ধাপ।
দিনটি স্লোভেনিয়ার মানুষের কাছে ঐক্যের প্রতীক। কারণ, রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে ডান-বামনির্বিশেষে সবাই সেদিন এক পতাকার নিচে দাঁড়িয়েছিলেন। যদিও এর ছয় মাস পর ১৯৯১ সালের জুনে তাদের স্বাধীনতার জন্য সংক্ষিপ্ত ‘১০ দিনের যুদ্ধ’ করতে হয়েছিল, কিন্তু মানসিক বিজয় অর্জিত হয়েছিল ২৬ ডিসেম্বরের সেই গণরায়ের মাধ্যমেই।

বিশ্বমানচিত্রে স্লোভেনিয়া

আজকের দিনে স্লোভেনিয়ায় সরকারি ছুটি থাকে। জাতীয় পতাকায় শোভিত হয় প্রতিটি বাড়ি। বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের নির্বাচনের রায়ের প্রতি পাকিস্তানিরা শ্রদ্ধা দেখায়নি বলেই আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছিল। স্লোভেনিয়ার ইতিহাসও আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জনগণের ম্যান্ডেট বা রায়ই হলো গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি। ২৬ ডিসেম্বর তাই স্লোভেনিয়াবাসীর কাছে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক গর্বিত দিন।