গণতন্ত্রের কথা বলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা কেন: সরকারকে মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করার জন্য এই সরকার উলঙ্গভাবে নেমে পড়েছে। বিএনপির সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এরা গণতন্ত্রের কথা বলে। গণতন্ত্রের কথা বলে বিরোধী দলের সমাবেশ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছ কেন?’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘মৃত্যুকূপে ধাবমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এই প্রশ্ন তোলেন।
এ সময় তিনি ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে বাসমালিকদের দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের উল্লেখ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করছেন যে আন্দোলন দমন করার জন্য এই সরকার কীভাবে উলঙ্গভাবে নেমে পড়েছে। বাসমালিকদের দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ করে দিচ্ছে। কেন, কারণটা কী? সমাবেশ যেন বড় না হয়। এ কোন মানসিকতা, সমাবেশ বড় না হওয়াতে তাদের লাভটা কী। তারা বলতে পারবে যে দেখো, বিএনপির সমাবেশ বড় হয়নি।’
কিন্তু তাতে কী হবে—এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মানুষের অন্তরের মধ্যে তোমাদের জন্য ঘৃণা এসে গেছে। প্রত্যেক মানুষ এখন তোমাদের ঘৃণা করে। কারণ, তোমরা শুধু মিথ্যার ওপরে, শুধু কথার ওপরে টিকে আছ। আর অন্য কোনো কারণ নেই। আর তোমাদের বন্দুক-পিস্তল যেসব বাহিনী আছে—সে বাহিনীর কারণে তোমরা টিকে আছ। এদের যদি আমরা সরাতে না পারি, তাহলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না, জাতির অস্তিত্ব থাকবে না।’
এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দ্বন্দ্বের ঘটনার উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন, আপনারা দেখছেন, কয়েক দিন ধরে নির্বাচন কমিশন নিয়ে কী চলছে। তাদের তৈরি করা নির্বাচন কমিশন—তাদের ডিসি-এসপিরা মানে না, তাদের কথা শোনে না। তাহলে এ নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে কাকে নির্বাচন করার জন্য, তাদের। একটা ভুয়া নির্বাচন দেখিয়ে তারা আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। দুবার করেছেও তা–ই।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) এত গণতান্ত্রিক যে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে দিয়েছে ২০১৪ সালে। আর ২০১৮ তে..., এত আস্থা তাদের জনগণের ওপর, তো আগের রাতে ভোট করতে হচ্ছে কেন? নির্বাচন দাও, একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন করো। সেখানে যদি টিকে থাকতে পারো, মোস্ট ওয়েলকাম। কিন্তু তোমরা জানো যে, সেটা তোমাদের পক্ষে নয়। সে কারণেই তোমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছ। তারপরে গায়ের জোরে, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে, নির্বাচন কমিশন তৈরি করে তোমরা বারবার করে ক্ষমতায় যাচ্ছ।’
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের অনির্বাচিত সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংসের খাদের প্রান্তে নিয়ে গেছে। সেখান থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশকে আবার ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে জিয়াউর রহমান জাতিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের মধ্য দিয়ে আবার যে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে সবাইকে আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বশক্তি দিয়ে জনগণের অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে এ ধরনের সম্পূর্ণ গণবিরোধী একটি শক্তি এখন দেশ চালাচ্ছে। আর নয়, সময় এসে গেছে যার যার যে শক্তি আছে; সেই শক্তি দিয়ে সমস্ত দেশের মানুষকে জড়িয়ে তুলতে হবে। শুধু ঢাকা শহরে নয়, সরা দেশে ছড়িয়ে পড়তে হবে।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের নুরে আলম, যুবদলের শহীদুল ইসলাম ও রাজা আহমেদ শাওনের স্মরণে জিয়া পরিষদ ‘মৃত্যুকূপে ধাবমান বাংলাদেশ’ নামের এই স্মরণিকা প্রকাশ করে। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আবদুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম, নুরে আলমের স্ত্রী ইফফাত জাহান, শহীদুল ইসলাম পিতা ছোয়াব আলী ভূঁইয়া ও রাজা আহমেদ শাওনের মা আমেনা বেগমকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
জিয়া পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জিয়া পরিষদের মহাসচিব এমতাজ হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি দেওয়ার মাহফুজুর রহমান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ প্রমুখ।