প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে রহস্য উন্মোচন

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম (শিমু) হত্যায় গ্রেপ্তার তাঁর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম (ছবিতে বাঁয়ে) এবং তাঁর বন্ধু এস এম ওয়াই আবদুল্লাহ ফরহাদ
ছবি: সংগৃহীত

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম (শিমু) হত্যায় স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম ও তাঁর বন্ধু এস এম ওয়াই আবদুল্লাহ ফরহাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দেয়।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খালেদুর রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার দুই আসামি শাখাওয়াত ও ফরহাদ এখন কারাগারে আছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এক টুকরা প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে কেরানীগঞ্জের আলীপুর সেতুর কাছ থেকে পুলিশ এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। তাঁর পরনে আটপৌরে সালওয়ার-কামিজ ছিল। মরদেহের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে জানা যায়, তাঁর নাম রাইমা ইসলাম। তিনি নিখোঁজ বলে কলাবাগান থানায় জিডি করেছিলেন তাঁর স্বামী।

মরদেহের পরিচয় পেয়েই রাইমা ইসলামের কলাবাগানের বাসায় যায় পুলিশ। তাঁর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম সে সময় বাসাতেই ছিলেন। পুলিশের প্রশ্নের জবাবে শাখাওয়াত বলেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় রাইমা বলেছিলেন, তিনি মাওয়া যাচ্ছেন। স্বামীর এই বক্তব্যে খটকা লাগে পুলিশের। রাইমা আটপৌরে সালওয়ার-কামিজে ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে পরিপাটি হয়ে বাইরে যেতেন তিনি। তাই বেড়াতে গেলে তাঁর এমন পোশাক পরার কথা না।

এরপর পুলিশ তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়িটি দেখতে যায়। গাড়ির পেছনে থাকা সুতার বান্ডিল দেখে রাইমা হত্যাকাণ্ডে স্বামীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে সন্দেহ জোরালো হয় পুলিশের। রাইমাকে বস্তায় ভরে যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, গাড়ির পেছনে পাওয়া যায় একই সুতা। গাড়িটি সেদিনই ধোয়া হয়েছিল। গাড়ির ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করতে ছিটানো হয়েছিল ব্লিচিং পাউডার।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পারিবারিক কলহের জেরে গত ১৬ জানুয়ারি গভীর রাতে রাইমাকে গলা টিপে হত্যা করেন স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম। পরদিন সকালে বস্তাবন্দী লাশ নিয়ে ঢাকার নানা জায়গায় ঘুরে রাতে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর এলাকার আলীপুর সেতুর নিচে ফেলে আসেন। পরে বাসায় ফিরে রাইমার বোনকে সঙ্গে নিয়ে কলাবাগান থানায় স্ত্রী নিখোঁজের ডায়েরি করেন।

দুই যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত রাইমা স্বামী ও দুই সন্তানের সঙ্গে রাজধানীর কলাবাগানের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৮ সালে পরিচালক কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। ২০০৪ সাল থেকে তিনি সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে পড়েন। তবে টিভি নাটকে অভিনয় করতেন। সবশেষ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে চাকরি নিয়েছিলেন।