বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব ও সম্পত্তিতে অধিকার–সম্পর্কিত পারিবারিক আইনে অসমতা নারীর ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে বহুমাত্রিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। অসম পারিবারিক আইনের কারণে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নারীর স্বাধীন মতপ্রকাশ, চলাচল, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ ও সক্ষমতা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিজস্ব কার্যালয়ের ‘আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে’ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটির আয়োজনে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহায়তায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডও দিবস উপলক্ষে ‘নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় চাই অভিন্ন পারিবারিক আইন’ শিরোনামে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহতাবুন নেসা। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সদস্য শায়কা শান্তা। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। নারীর জীবনে উদ্ভূত নানা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট সিডও কমিটি বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সুপারিশ জমা দেয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিডও কমিটি ৪০টি সাধারণ সুপারিশ জমা দিয়েছে। সিডওর ২১ নম্বর সাধারণ সুপারিশে বিবাহ এবং পারিবারিক বিষয়, যেমন সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার, পুরুষ আত্মীয়ের মতো সম্পত্তিতে সম–অংশ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের জন্য ধর্মভিত্তিক বৈষম্যপূর্ণ আইন বিলোপ করে আইন সংস্কার এবং নতুন আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, নারী আন্দোলন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, নারীর মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র-সমাজ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে সিডও সনদের দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে এর পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। নারীর জীবনে কার্যকর সমতা আনার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা করা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় সিডও সনদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। নারী ও পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে সমভাবে যেন সুযোগ পায়, সে লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য সংবিধানে বলা হলেও তা বাস্তবে হয়নি। সিডও সনদ বাস্তবায়িত হলে নারীর ও পুরুষের মধ্যে থাকা বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। সমাজে ক্ষমতা দখলের জন্য সহিংস আচরণের সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে একটা হাতিয়ার হচ্ছে সিডও।
ফওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, স্থায়ী উন্নয়নের জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। নারীর প্রতি ক্ষতিকর আচরণ বন্ধ করতে হবে, এটি সিডও সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া সম্ভব নয়। সমতার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বহ্নি দাশ পুরকায়স্থ, ঢাকা মহানগরের সদস্য হেনা চৌধুরী, সদস্য সৈয়দা রত্না, শাহজাহানপুর পাড়া কমিটির সদস্য মেহেনাজ আক্তার ও অন্য সংগঠকেরা। সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর কমিটির অর্থ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সদস্য ফেরদৌস জাহান।