ট্রেড ইউনিয়ন গঠন আরও সহজ হচ্ছে

সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রস্তাবিত শ্রম আইন নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেনছবি: প্রথম আলো

প্রস্তাবিত বাংলাদেশ শ্রম আইন আবারও সংশোধন হচ্ছে। তাতে শিল্পকলকারখানায় টেড্র ইউনিয়ন গঠন করা আরও সহজ করা হচ্ছে।  

প্রস্তাবিত আইনে (জাতীয় সংসদে বিলটি পাস হলেও ভুল থাকায় রাষ্ট্রপতি সেটি ফেরত পাঠান) ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে কারখানার শ্রমিকের সংখ্যা অনুযায়ী সমর্থনসংক্রান্ত স্বাক্ষরের হার কম–বেশি করে একাধিক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত হলো, এখন সব ধরনের কারখানার ক্ষেত্রেই কমপক্ষে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত বা তাঁদের সমর্থন থাকলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।

১৫ শতাংশ করার বিষয়টি আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রস্তাবিত শ্রম আইন নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

আরও পড়ুন

আগে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত বা তাঁদের সমর্থনসহ আবেদন না করলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যেত না। গত বছর মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত আইনের যে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়, তাতে এ বিষয়টি ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকের সংখ্যা যদি ৩ হাজারের কম হয়, তাহলে ২০ শতাংশের সমর্থন লাগবে। আর তিন হাজারের বেশি হলে সেটি ১৫ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে এবং আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে সেখানে তাঁরা করতে পারবেন। এ ছাড়া গ্রুপ অব কোম্পানি হলে ২০ শতাংশ শ্রমিক চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে। বর্তমান আইনে ৩০ শতাংশ শ্রমিক চাইলে তা করা যায়।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আগে ছিল ১৫ শতাংশের হার হবে শুধু যেসব কারখানায় তিন হাজার বা তার বেশি শ্রমিক আছে, সেগুলোতে। এখন এটি তুলে দেওয়া হয়েছে। সব শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশ কাজ করবে।’

চলতি অধিবেশনে আইনটি পাস না হওয়ার ইঙ্গিত

আরও পড়ুন

মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে পাস হলেও ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩’ এ সই না করে গত বছরের ২০ নভেম্বর তা সংসদে ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ২২ নভেম্বর সংসদ সচিবালয় এ-সংক্রান্ত বার্তাসহ বুলেটিন প্রকাশ করে।

এ বিষয়ে গত বছর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিলটি গেল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর নতুন সংসদে তোলা হবে। তিনি তখন আরও বলেছিলেন, একটি ভুল থাকায় বিলটি নতুন সংসদে উপস্থাপন করা হবে ও তা সংশোধন করা হবে।

তবে আজকে আইনমন্ত্রীর কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেল বিলটি সংসদের চলতি অধিবেশনে নাও উঠতে পারে। অবশ্য এটি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

আরও পড়ুন

আইনমন্ত্রী বলেন, তারা (সরকার) চাচ্ছিলেন শ্রম আইনটি সংসদের চলতি অধিবেশনে পাস করার জন্য। কিন্তু আইএলও যেসব পরামর্শ দিচ্ছে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি, হবে না, সেটি এই অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া  যাবে না।

আইএলওর প্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়ে যদি একটি সমন্বিত আইন করা হয় তাহলে আগামী মার্চ মাসে আইএলও গভর্নিং বডির সভায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেছেন আইনমন্ত্রী।

তবে এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকেরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান আনিসুল হক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। তাই আজকের আলোচনা তাঁকে অবহিত করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। আজকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী বলেন, আইএলওর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আবারও সভা হবে। এ ছাড়া আইএলওর উদ্যোগে অংশীজনদের নিয়ে একটি সভা হবে। সেখানে মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা হবে। আগামী মার্চের আগেই এই সভা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
আইএলওর প্রতিনিধিরা সংজ্ঞার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কিছু কিছু বিষয়ে একমত হননি আইনমন্ত্রী।