তিন কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে থাকে

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়া শুরু হয়। এই বিপর্যয়ের কারণসহ সামগ্রিক বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তাঁর পরামর্শ হচ্ছে মঙ্গলবারের বিপর্যয়ের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি পূর্ণাঙ্গ স্টাডি (অধ্যয়ন) করতে হবে এবং বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের (স্বয়ংক্রিয়) আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদার।

বুয়েটের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সাবেক বিদ্যুৎ–সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, জাতীয় গ্রিডের কাজ হলো বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। ৫০ হার্টজে (কম্পাঙ্কের একক) এটি করা হয়ে থাকে। লক্ষ্য ৫০ হার্টজ হলেও কিছুটা লিওয়ে (অতি সামান্য বিচ্যুতি) থাকে (৪৮ থেকে ৫২ হার্টজ পর্যন্ত), ভারসাম্যে ব্যতিক্রম হলে উৎপাদন বাড়িয়ে বা চাহিদা কমিয়ে এটা রক্ষা করা হয়। উল্লেখিত ব্যান্ডের সীমা অতিক্রম করলেই গ্রিড বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

ইজাজ হোসেন: এ ধরনের পরিস্থিতিতে (বিপর্যয়) বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও নিজের মতো চলতে থাকে। কিন্তু উত্তরটা আমরা এখনো পেলাম না যে এই জিনিসটা হবে কেন? ওটা হলে এটা হয়, সেটা আমরা জানি। এটা পাঠ্যবইয়েই লেখা আছে যে ফ্রিকোয়েন্সি (কম্পাঙ্ক) এটা হলে ওটা ঘটে। কিন্তু ফ্রিকোয়েন্সিটা অস্বাভাবিক হবে কেন? বিদ্যুৎ বিপর্যয়টা ঘটল কেন, তার উত্তর কিন্তু এখনো মেলেনি। কোনো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র কি জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, কোনো সঞ্চালন লাইন কি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এসব তো বলা হচ্ছে না। সাবেক বিদ্যুৎ–সচিবের বক্তব্যেও এসব বিষয় স্পষ্ট নয়।

কোনো কারণে হঠাৎ বিদ্যুতের লোড (চাপ) বেড়ে যেতে পারে। যেমন কোনো দেশে ফুটবল খেলা আরম্ভ হবে বলে সবাই টেলিভিশন চালু করলেন। এমন পরিস্থিতিতে লোড বাড়তে পারে। লোড বেশি থাকা অবস্থায় কম বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া প্রকৌশলীদের জন্য কঠিন কাজ। যা–ই হোক, কোনো একটা জিনিস ঘটেছে, সেটা এখন কর্তৃপক্ষকে বের করতে হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: মঙ্গলবারের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ কী বলে মনে করেন?

ইজাজ হোসেন: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সাইবার থ্রেট ও অপারেশনাল এরর—এই তিন কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। মঙ্গলবার যে বিপর্যয় ঘটেছে, তার কারণ বের করতে পুরো বিষয়টার একটা পূর্ণাঙ্গ স্টাডি (অধ্যয়ন) ও অ্যানালাইসিস (বিশ্লেষণ) করতে হবে। তবে মঙ্গলবারের বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি ছোটখাটো বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ঘটে না। বড় একটা কেন্দ্র যদি সিস্টেম (গ্রিড) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এমনটা ঘটতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বা সঞ্চালন লাইন—এ দুই কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয়টি ঘটে থাকতে পারে। হয়তো (মঙ্গলবার) ফ্রিকোয়েন্সি সাংঘাতিক বেড়ে যাচ্ছিল, লোড বাড়ছিল, যথেষ্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছিল না।

প্রতিদিন একই সময়ে একইভাবে বিদ্যুতের লোড বাড়বে, এটা সত্য নয়। সাধারণত লোড বাড়া-কমার সময়েই এই গোলমালগুলো (বিপর্যয়) হয়। তবে পুরো ডেটাটা না থাকলে ভুলটা ধরাও কঠিন। কারণ, মিলিসেকেন্ডের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে যায়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বিদ্যুৎ বিপর্যয় এড়াতে আপনার পরামর্শ কী?

ইজাজ হোসেন: যেকোনো সময় যেকোনো দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটতে পারে। কিন্তু একই ঘটনা যদি মাসখানেকের মধ্যে আবার ঘটে, তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে গলদ আছে। এ ধরনের ঘটনা আবার হওয়ার সম্ভাবনাটা ভয়ের। তাই পুরো বিষয়টি স্টাডি করে কারণ বের করতে হবে। আমার মতে, বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনগুলো স্টাডি করলে এই বিপর্যয়ের কারণ জানা যাবে। একটা পূর্ণাঙ্গ স্টাডি দরকার। যদিও এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। কারণ, পুরো প্রক্রিয়াটা অটোমেটেড নয়, ম্যানুয়ালি অনেক কিছু করতে হয়। এ অবস্থায় কারণ বের করাটাও অনেক কঠিন। আমাদের এখানে লোড বেশি, কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র কম। বিদ্যুৎ বিপর্যয় এড়াতে (বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার) পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনে নিয়ে আসা জরুরি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ইজাজ হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন