প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘শুভবুদ্ধি মনে হয় দেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছে। তারপরও আমরা কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আছি। আমাদের লড়তে হবে। শুধু প্রতিবাদ করলে হবে না।...সেদিন যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা একটা ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু তারপরে সরকারের যে নিষ্ক্রিয়তা, সেটা ভয়ংকর।’
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানাতে এসে শিরীন পারভীন হক এ কথাগুলো বলেন।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)। এই প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি জানাতে আসেন। প্রতিবাদ সভা শেষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পাশের রাস্তায় মানববন্ধন করেন তাঁরা।
সভায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘এটা আমাদের ফ্রিডম অব স্পিচের (বাক্স্বাধীনতা) ওপরে শুধু নয়, শিক্ষা-সংস্কৃতি সবকিছুর ওপরে আঘাত এসেছে। ছায়ানট কেন ভ্যান্ডালাইজ করা হলো? প্রশ্নটা রাখছি বর্তমান সরকারের কাছে।’ এ ছাড়া সাম্প্রতিককালে বাউল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলার প্রসঙ্গ তুলে একে ‘অরাজকতা’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করার পর সরকার মাথা নত করেছিল উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘১৪ লাখ বাচ্চার ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে ২০০ শিক্ষার্থী গিয়ে আন্দোলন করেছে, তারপরে দেখলাম এই মবের রাজত্ব হয়ে গেছে বাংলাদেশ।’
প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর কেন্দ্রস্থলে মবতন্ত্র শুরু হয়েছে, সচিবালয়ের অভ্যন্তরে মবক্রেসি হয়েছে এবং সেটা দিয়ে শুরু দখলবাজি-দলবাজি।’ বিদ্যমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন এখন জাতীয় প্রশ্ন।
ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়ার পর সেখানে আটকা পড়েন সেখানকার সংবাদকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই মূল দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের। এখানে আমাদের অধিকার রক্ষা করা, জীবন-জীবিকা রক্ষা করা, বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্বটা তাদের।’ ঘটনার সময় সরকারের কোনো দায়িত্বশীল কেউ কেন আসেননি, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে সারা হোসেন বলেন, ‘যদি আমরা গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন রক্ষা করতে চাই, এখন আমাদের সবাই মিলে প্রতিরোধ করতে হবে এবং সরকারে যে মানবাধিকারকর্মীরা বসে আছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করতে হবে।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে প্রথম আলোর কার্যালয় পুড়ে যায়। একই রাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়েও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়। সে সময় সাংবাদিকদের রক্ষায় ডেইলি স্টার কার্যালয়ে গেলে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়। এ ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই হামলার ঘটনা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার শামিল। ওই রাতে ছায়ানট ভবনেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় উদীচী কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।