টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোরের মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

লাশ
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এক কিশোরের (১৬) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গতকাল মধ্যরাতে।

পরিবারের অভিযোগ, ওই কিশোরকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করেছে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা লোকজন। এ কারণে সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা যায়।

ওই কিশোরের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তার পরিবার রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় থাকে। গত ২৭ জানুয়ারি ওই এলাকার এক ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ তাকে আটক করে। পরে আদালতের মাধ্যমে ২৮ জানুয়ারি তাকে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, পুরো শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এখন ৬৫০ বালক থাকে। মৃত কিশোর ডরমিটরি ভবন-২-এ থাকত। এখানে তার সঙ্গে থাকত প্রায় ৪০০ বালক। গত রোববার বেলা দুইটার দিকে হঠাৎ ওই কিশোর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শরীরে জ্বর ছিল, মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যায় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রের এক আনসার সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোর গত শনিবার দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার সময় বারবার ঢলে পড়ছিল।

কিশোরের বাবার অভিযোগ, তাদের ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে গত শনিবার। কিন্তু তাদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে এক দিন পর। হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ছেলে কোনো কথা বলছে না। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হাত-পায়ে আঘাতের দাগ।

এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তির তিন থেকে চার দিন আগে তিনি ও স্ত্রী মিলে ছেলেকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন ছেলে বলেছিল, কেন্দ্রের লোকজন তাকে মারধর করে, ঠিকমতো খেতে দেয় না। এই বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্যাতন করে মেরেছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। আমরা এটার বিচার চাই।’

ওই কিশোরের লাশের সুরতহাল করেছে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মো. সানারুল হক। এ বিষয়ে জানতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমরা কিশোরের ডান চোখের নিচে ও দুই হাতে ছিলা জখম পেয়েছি। এখন সেটা পড়ে গিয়ে হয়েছে, নাকি মারধরে হয়েছে, সেটা আমরা জানি না। চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ হিসেবে লিখেছে হার্ট ফেইলিউর। আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

এসব বিষয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেটি আমাদের এখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে মারধর বা নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিবারের অভিযোগ সত্য নয়। তারপরও যদি এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তবে সে শাস্তি আসুক, সেটা আমরা মাথা পেতে নেব।’