ফ্যাশনে ঈদের আমেজ

প্রতিবছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হলো বার্জার-প্রথম আলো ঈদ ফ্যাশন ২০২৩। নির্বাচিত আট ডিজাইনারের সৃজনশীল পোশাক নিয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ক্যাটওয়াক করেন জনপ্রিয় মডেলরা। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের র‌্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে-ভিউতে
ছবি: সৌরভ দাশ

দিনভর সূর্যের দেখা নেই। মেঘে ঢাকা আকাশে গুমোট পরিবেশ। দিনের সে পরিস্থিতি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সন্ধ্যায়; সুরের ঝরনাধারা আর ফ্যাশনের ঝলমলে আলোর দ্যুতিতে। সুর, নৃত্য ও ফ্যাশনের সন্ধিতে সেই সন্ধ্যা হয়ে উঠল মনোরম। ছড়িয়ে দিল ঈদের আমেজ।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এই আসর বসেছিল চট্টগ্রাম নগরের পাঁচ তারকা হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে-ভিউয়ের মেজবান হলে। বর্ণিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বার্জার-প্রথম আলো ঈদ ফ্যাশন। এবারের আয়োজনে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নানা পেশার আমন্ত্রিত অতিথিরা।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চট্টগ্রামে নিয়মিত এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে প্রথম আলো। এবার ২২তম আসর। করোনা মহামারির জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে এ প্রতিযোগিতা হয়নি।

অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটায়। সন্ধ্যার আঁধার দূর করে ঝলমলে আলোয় পর্দা ওঠে মঞ্চের। সুরের মায়া নিয়ে হাজির হন সরলা ব্যান্ডের শিল্পীরা। গেয়ে শোনান চারটি গান। সুরের আবেশ শেষ হতেই মঞ্চে উপস্থিত হন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ঈদের বারতা নিয়ে আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। সেই ১৯৯৮ সাল থেকে চট্টগ্রামে আমরা ঈদ ফ্যাশনের আয়োজন করে আসছি। আমরা ফ্যাশন ডিজাইনারদের দেশের সামনে তুলে ধরেছি।’

বক্তব্যের পরপরই শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ফ্যাশন কিউ। ঝলমলে মঞ্চে দ্যুতি ছড়ানো রং-বাহারি পোশাক পরে হাজির হন মডেলরা। নির্বাচিত ডিজাইনারদের করা এসব পোশাকে ছিল ঈদের আমেজ।

এবারের ঈদ ফ্যাশনে ছিল না অন্যান্যবারের মতো প্রথাগত কোনো প্রতিযোগিতা। তার পরিবর্তে চট্টগ্রামের শীর্ষ আট ফ্যাশন ডিজাইনারকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন এইচ এম ইলিয়াস, আইভি হাসান, সুলতান নুরজাহান রোজী, কাজী শাহতাজ পারভীন, নাসরিন সরওয়ার, নূজহাত নূয়েরী, ফারজানা মালিক ও জান্নাতুল ফেরদৌস। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রথম আলোর ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা থেকে উঠে আসা। তাঁদের নকশা করা পোশাকের সুনাম এখন দেশ-বিদেশে। অনুষ্ঠানে এই ডিজাইনারদের বিভিন্ন সময় পেশাগত সাফল্য ও কাজের বর্ণনা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

ডিজাইনাররা পোশাকে বাঙালির ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন, একই সঙ্গে ছিল আধুনিকতা আর পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ, লেহেঙ্গা, গাউন যেমন ছিল, তেমনি ছিল ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ব্লেজার।

ডিজাইনার নূজহাত নূয়েরি প্রথম আলোকে বলেন, এবারের ঈদে আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ থাকবে। এ কারণে আরামদায়ক কাপড়ে হালকা রং ব্যবহার করে তিনি পোশাকের নকশা করেছেন। নকশায় রয়েছে নানা ফিউশন।

ফ্যাশন কিউর ফাঁকে ফাঁকে মঞ্চে হাজির হন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। একপর্যায়ে মঞ্চে এসে হাজির হন অ্যালেন স্বপন খ্যাত অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান। এসেই দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারলাম না। আপনাদের কাছে চলে আসতে হলো। আজকের অনুষ্ঠান খুব ভালো লাগছে।’ তিনি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির সাবস্ক্রিপশন করার অনুরোধ জানান।

অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম তাঁর বক্তব্যে চরকিতে তাঁর প্রথম কাজ মারকিউলিস নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই সিরিজে আমি সিনথিয়া করিমের চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং। আমরা চারপাশে হরহামেশা সিনথিয়াকে দেখি। নারীর লড়াইকে তুলে ধরা হয়েছে।’

চট্টগ্রামের আতিথেয়তায় মুগ্ধতার কথা জানিয়ে বক্তব্য দেন অভিনেত্রী আশনা হাবীব ভাবনা।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল আট ডিজাইনারকে সম্মাননা প্রদান। এতে উপস্থিত ছিলেন জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল, বার্জার বাংলাদেশ লিমিটেডের চট্টগ্রাম ফ্যাক্টরি প্রধান কাওসার হাসান, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি।

জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, সংবাদ সংগ্রহ ও বিতরণে প্রথম আলো শীর্ষে। তারা দেশের প্রতি দায়বদ্ধ। দেশের মানুষের মেধা ও মননের বিকাশে প্রথম আলো অগ্রগণ্য। বিভিন্ন বিপদ-আপদে, দুর্যোগে প্রথম আলো দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায়। পত্রিকাটি নিয়মিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয়, গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

বার্জার বাংলাদেশ লিমিটেডের চট্টগ্রাম ফ্যাক্টরি প্রধান কাওসার হাসান বলেন, ‘বার্জার মানুষের মেধা ও মননের বিকাশে সব সময় মনোযোগী। প্রথম আলোর লক্ষ্যও একই। এ কারণে আমরা বারবার একত্র হই। সামনে আরও নানা আয়োজনে প্রথম আলোর সঙ্গে আমরা থাকব।’

ফ্যাশন শোয়ের কোরিওগ্রাফার ছিলেন বুলবুল টুম্পা ও সালেহ জন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লুবাবা ফেরদৌসী। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ডিজাইনারদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন অতিথিরা। রূপসজ্জায় সহযোগী ছিল পারসোনা।