বাসার লিফট থেকে নামতেই সদ্যবিদায়ী উপাচার্যের পায়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতা, ভিডিও ভাইরাল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী উপাচার্য শিরীণ আখতারের পায়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতা মইনুল ইসলামছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী উপাচার্য শিরীণ আখতারের পায়ে পড়েন ছাত্রলীগের এক নেতা। এই ঘটনার সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চাকরির জন্য’ ছাত্রলীগের এই নেতা এ কাজ করেছেন বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা আছে। তবে চাকরির জন্য শিরীণ আখতারের পায়ে পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা।

২০ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম নগরের লাভ লেন এলাকায় উপাচার্যের বাসায় এই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘটনার সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

শিরীণ আখতারের পায়ে পড়া ছাত্রলীগ নেতার নাম মইনুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি। ক্যাম্পাসে মইনুল নিজেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন।

ঘটনার সময় মইনুলের সঙ্গে ছাত্রলীগের আরও দুই নেতা ছিলেন। তাঁরা হলেন শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি মুজিবুর রহমান ও কে এম রোমেল হোসেন। তাঁরাও নিজেদের নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁরা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের নেতা।

ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ভিডিওটি ২০ মার্চ সকালের। তখনো শিরীণ আখতার উপাচার্যের দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি।

ছড়িয়ে পড়া সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শিরীণ আখতার তাঁর বাসার লিফট থেকে বের হচ্ছেন। তিনি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মইনুল তাঁর পায়ে পড়েন। শিরীণ আখতার এ সময় মইনুলকে সরিয়ে দিয়ে তাঁর গাড়িতে উঠে যান। একপর্যায়ে শিরীণ আখতারের গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেন মইনুল ও মুজিবুর। পরে উপাচার্য গাড়িতে করে চলে যান। এসব ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন রোমেল।

ঘটনার পর ক্যাম্পাসে গিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিরীণ আখতার উপাচার্যের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মো. আবু তাহের।

দায়িত্ব ছাড়ার আগের দিন শিরীণ আখতার কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা ছাড়াই ৩৭ কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন।

শিরীণ আখতার গত শনিবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে জিম্মি করে এসব নিয়োগে সই নিয়েছেন।

ভিডিওর বিষয়ে জানতে চেয়ে শিরীণ আখতারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে গত শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মইনুল চাকরির জন্য চাপ দিয়েছে, জোর করেছে।’

নিয়োগের জন্য শিরীণ আখতারের পায়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মইনুল প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ৩০ জানুয়ারি শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই কমিটি বাতিল করতে তিনি শিরীণ আখতারকে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি কোনো নিয়োগ চাননি।

একই কথা বলেন মুজিবুরও। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির বিষয়ে কথা বলতেই তিনি মইনুলের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন।

রোমেলকে কল করা হলে তিনি এই প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। সাংবাদিক মারধর, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজির অভিযোগের পর গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর শাখা কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র।

শাখার রাজনীতি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আরেকটি সাবেক সিটি মেয়র নাছিরের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। দুটির পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। এর মধ্যে নাছিরের ৯টি, বাকি ২টি মহিবুলের।

নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত একাকার উপপক্ষের নেতৃত্ব দেন মইনুল। নিয়োগ নিয়ে এই উপপক্ষটির বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল।

গত বছর ৩০ জানুয়ারি সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্যের কার্যালয় ভাঙচুর করেছিল উপপক্ষটি। শুধু তা–ই নয়, নিয়োগের জন্য সেদিন তিন ঘণ্টা শাটল ট্রেনও অবরোধ করেছিলেন তাঁরা।