দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল

আবরার ফাহাদফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ৯ আসামি আপিল করেছেন। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকা অপর এক আসামি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত মাসে ও চলতি মাসে এসব আপিল ও লিভ টু আপিল করা হয়।

এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে গত ১৬ মার্চ হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ১৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম ১৯ মে আপিল করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের তথ্য অনুসারে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. মেফতাহুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান (রাসেল) গত মাসে পৃথক আপিল করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইফতি মোশাররফ, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মিজানুর রহমান, মো. শামসুল আরেফিন, মো. অনিক সরকার ও খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম চলতি মাসে পৃথক আপিল করেছেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৪ জুন লিভ টু আপিল করেন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মো. আকাশ হোসেন।

খন্দকার তাবাককারুল ইসলামসহ মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা সাত আসামি ও যাবজ্জীবন বহাল থাকা এক আসামির পক্ষে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী।

মাসুদ হাসান চৌধুরী আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে খন্দকার তাবাককারুলসহ সাতজন পৃথক সাতটি আপিল করেছেন। এসব আপিলে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছেন আকাশ হোসেন।

এই আইনজীবী বলেন, যাবজ্জীবন দণ্ডিতের লিভ মঞ্জুর (আপিল করার অনুমতি পেলে) হলে আপিলের ওপর শুনানি হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল ও যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের আপিলের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়। সর্বোচ্চ আদালতে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা মেহেদী হাসান গত মাসে আপিল করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন। আজ শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেহেদী হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, এমন সব যুক্তিতে আপিল করা হয়েছে। বিচারিক আদালত এবং হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়ার পাশাপাশি তাকে খালাস দেওয়ার আরজি রয়েছে আপিলে।

সাড়ে পাঁচ বছর আগে বুয়েটের একটি হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের সবাই ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতা-কর্মী।

এ ঘটনায় করা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারিক আদালতের রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৬ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।

মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান (রাসেল), মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান (রবিন), ইফতি মোশাররফ, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মেফতাহুল ইসলাম, মো. মাজেদুর রহমান, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল (জেমি), মো. শামসুল আরেফিন, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ।

এই ২০ জনের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ের সময় থেকেই তিনজন পলাতক। তাঁরা হলেন মোর্শেদ-উজ-জামান, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুনতাসির আল (জেমি) গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান। বিষয়টি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ। এ মামলায় সব মিলিয়ে দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে ৪ জন পলাতক বলে রায় ঘোষণার দিন (গত ১৬ মার্চ) জানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ।

আরও পড়ুন