মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেমড সেলে নয়, রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেমড সেল) রাখা যাবে না—হাইকোর্টের দেওয়া এ রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনটি করে।

বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত আসামিকে কনডেমড সেলে রাখার বৈধতা নিয়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেমড সেলে থাকা তিন আসামি ২০২১ সালে হাইকোর্টে  রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঘোষণা, পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

আজ রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন দায়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আবেদন দায়ের করা হয়েছে। যেহেতু পূর্ণাঙ্গ রায় পাইনি, রায়ের নির্দেশনা স্থগিত রাখার জন্য আবেদন থাকবে। কারণ, হাইকোর্টের রায় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিপি (লিভ টু আপিল বা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘রায়ে জামিনের কথা বলা হয়েছে এবং কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বাদীর আইনজীবীর মুখে শুনেছি ও পত্রপত্রিকায় দেখেছি। এর মধ্যে নতুন আইন করার সময় কিছু বিষয় যুক্ত করতে হবে, তারপরে রাষ্ট্রপতির কাছে কেউ যদি আবেদন করে (দণ্ড মওকুফের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা)—সেটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলা যাবে না। এই বিষয়গুলো নিয়ে সোমবার যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আপিল দায়ের করা হবে। এর আগে সিপি করব। সিপি মঞ্জুর হলে আপিল করা হবে, সে জন্য আবেদনটি করা হয়েছে। চেম্বার আদালতে আগামীকাল বুধবার শুনানি হবে।’ অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এ সময় ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।

এক প্রশ্নের জবাবে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডাদেশ যার থাকে, সে ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত শুনিনি কোনো জামিন আবেদন হয়েছে। এটি হয় না। কারণ, ৪৯৭ ধারার সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ হতে হবে। কেউ যদি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হন…তাঁকে যদি জামিন দেওয়া হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু পালিয়ে যাবেন।’

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে অন্য বন্দীর মতোই দেখতে হবে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা অন্য বন্দীদের নিরাপত্তার স্বার্থে, সংক্রামক রোগ, স্বাস্থ্যগত বিষয়সহ ব্যতিক্রম পরিস্থিতির কারণে তাঁকে কনডেমড সেলে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিনের নজির দেখা যায় না উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী জামিন আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের জামিন আবেদন গ্রহণ করা উচিত।