যত বৈষম্যের শিকার উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরাছবি: প্রথম আলো

সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলেও উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তাঁরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের কোনো ভূমিকা থাকে না। উপজেলা চেয়ারম্যানরা একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন প্রকল্প নেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা কোনো কাজের জন্য জনবল বা লজিস্টিক সহায়তা চাইলেও পান না।

‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ: নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এই সভা আজ শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা বিভাগের আটটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা বলেন, পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হলেও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের কোনো কার্যকারিতা নেই। ভোটের সময় জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজের ক্ষেত্রে অসমতা আছে। নারীদের জন্য উপজেলার বাজেটের তিন শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও তা নিজেদের মতো ব্যবহার করা যায় না। প্রত্যন্ত এলাকায় যাতায়াতের জন্য গাড়ি বরাদ্দ, স্থানীয় উন্নয়নে ভাইস চেয়ারম্যানদের বরাদ্দ বাড়ানো, ভাইস চেয়ারম্যানদের কাজ সুনির্দিষ্ট করা, বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন বাতিল করে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য নতুন বরাদ্দ দেওয়া এবং নথি স্বাক্ষরের ক্ষমতা দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

সভায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে যে পরিপত্র আছে, সেটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সংকট থাকবে না। বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক সংকট আছে। যেটুকু ক্ষমতা পাওয়া গেছে, একে কীভাবে পরিষদকেন্দ্রিক করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, নারীরা সংগ্রাম করলেও ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে কেবল পুরুষকেই দেখা যায়। রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হলে উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ত্রুটি, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীরা মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতিতে এসেছেন। মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতার জন্য লড়াই করতে হবে। নিজ দায়িত্ব বোঝার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কীভাবে কাজ করতে পারে, সেদিক বিবেচনায় রাখতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের  সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, নারী জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা ও সম্মান এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। ক্ষমতায়ন এখনো হয়নি। উপজেলা পরিষদের থাকা সম্পদের ব্যবহার নারীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। উপজেলা পরিষদের ১৭টি স্থায়ী কমিটির কাজ ও সিদ্ধান্ত তদারকির দায়িত্ব মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের দিতে হবে।

মধুখালী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সুরাইয়া সালাম বলেন, বাজেট বরাদ্দ নিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য আছে, তা দূর করতে হবে। নির্বাচনের ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় তা বহন করতে না পারার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে।

সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন। তাতে বলা হয়, ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো দেশে উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ রাখা হয়। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা পরিষদের একাধিক স্থায়ী কমিটির সভাপতি। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন, কুটির ও ক্ষুদ্রশিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সমবায় সমিতি, সমাজকল্যাণ ও জনহিতকর কার্যক্রম, নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ রোধে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা কাজ করবেন বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে। দায়িত্ব বিভাজনের ক্ষেত্রে একধরনের ‘জেন্ডার’ পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়, যা সমাজের প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য সেলিমা আহমেদ, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু প্রমুখ। উপস্থিত ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন শিবপুর উপজেলার তাপসী রাবেয়া, কাপাসিয়া উপজেলার রওশন আরা বেগম, সাভারের ইয়াসমিন আক্তার, পাংশা উপজেলার রোকেয়া বেগম, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাসুমা আক্তার, বেলাব উপজেলার শারমিন আক্তার, ধামরাই উপজেলার সোহানা জেসমিন প্রমুখ।